Home / দেশ বিদেশ / যেভাবে করোনা মুক্ত দেশ হল নিউজিল্যান্ড

যেভাবে করোনা মুক্ত দেশ হল নিউজিল্যান্ড

লড়াইটা বোধহয় আবার নতুন করে শুরু হলো। ক্লান্ত পা দুটো টান টান করে ফের দৌড় দেওয়ার পালা। এতদিন উদ্দেশ্যহীন ভাবে দৌড়াচ্ছিল সবাই। নিউজিল্যান্ড(New Zealand) দেখিয়ে দিল সঠিক সেই গন্তব্যের ঠিকানা। কিভাবে অদৃশ্য ভাইরাসের মৃত্যুর চক্রব্যূহ থেকে বেরিয়ে এক বুক অক্সিজেন(Oxygen) নেওয়া যায়। করোনা মুক্তির খবর পেয়ে ঠিক থাকতে পারেননি নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন। নিজের ড্রয়িংরুমে মেয়েকে নিয়ে আনন্দে নাচতে থাকেন তিনি। সাংবাদ সম্মেলন করে সগর্বে জানান, হ্যাঁ, আমরা করে দেখিয়েছি। নিউজিল্যান্ড এখন করোনা(Corona) মুক্ত।করোনা

যেভাবে করোনা মুক্ত দেশ হল নিউজিল্যান্ড

এই প্রথম বিশ্বের কোনো দেশ পুরোপুরি করোনা(Corona) থেকে মুক্ত হতে পেরেছে। গত ১৭ দিনে একটিও করোনা পজিটিভের খবর মেলেনি। ওই সময় প্রায় ৪০ হাজার নমুনা পরীক্ষা করা হয়। রেজাল্ট জিরো। মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে খুলছে দোকানপাট, অফিস-আদালত, শপিংমল, সিনেমা হল। অর্থনীতির চাকায় শান দিতে পর্যটন ক্ষেত্রকেও চাঙ্গা করার পরিকল্পনা শুরু হয়ে গেছে। সবার মনে একটাই কৌতূহল দানা বেঁধেছে, কিভাবে পারল নিউজিল্যান্ড!

করোনা ফ্ল্যাশব্যাক:

মোট আক্রান্ত- ১৫0৪

মৃত- ২২

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে লড়াই শুরু হয় নিউজিল্যান্ডের। ১৭ মার্চ ১২ জন আক্রান্তের খবর(News) মেলে। ২৪ মার্চ ১০৩ জন। ২৮ মার্চ একেবারে সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছয়। মাত্র ১৪৬ জন। তারপর এক সপ্তাহ একশোর নীচে। ৮ এপ্রিল থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ৫০ নীচে ছিল করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। সেই শেষ। তারপর টানা ১৭ দিন কোনো করোনা(Corona) সংক্রমণের খবর মেলেনি।

করোনার রুখতে যেসব পদক্ষেপ:

লকডাউন : গত ১৯ মার্চ ২৮ জনের করোনা(Corona) পজিটিভের খবর মেলে। এরপরই আরডার্ন সরকার সিদ্ধান্ত নেয় সীমান্ত বন্ধ করার। একশো জনের বেশি জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

লেভেল ১-৩: ৪টি স্তরে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। ২৩ মার্চ প্রাথমিক সতর্কতা জারি করা হলেও দুই দিন পরই লেভেল ৩ লকডাউন(Lockdown) জারি করা হয়। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া সব ধরণের ব্যবসা বাণিজ্য, কোনো রকম জমায়েত, অনুষ্ঠান পুরোপুরি বন্ধ করা হয়। স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখা হয়।

লেভেল ৪: এরপরই লেভেল ৪ লকডাউনের পথে হাঁটে আরডার্ন সরকার। দেশজুড়ে সম্পূর্ণ লকডাউন(Lockdown) ঘোষণা হয়। তখন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা মাত্র ২৮৩। উল্লেখ্য, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসতেই ২৭ এপ্রিলে ফের লেভেল ৩ চলে আসে, অর্থাত্ বেশ কিছু ক্ষেত্রে লকডাউন শিথিল করা হয়।

গত ১৭ দিন করোনা সংক্রমণ না থাকায় লেভেল ১-এ ফিরে এসেছে নিউজিল্যান্ড(New Zealand)। তবে, সংক্রমণ আতঙ্ক একেবারে উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। এখনো বেশ কিছু ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ কড়া করা হয়েছে।

করোনা পরীক্ষা:
মার্চের শুরুতেই করোনা প্রভাবিত দেশগুলো থেকে আসা নাগরিকদের নমুনা পরীক্ষা(Sample test) করা হয়। অনেকক্ষেত্রে উপসর্গ থাকলেও নির্ধারিত চেকলিস্টে না থাকায় ছেড়ে দেওয়া হয়। ১০ মে পর্যন্ত ১ লাখ ৯৪ হাজার ১৯১ টি নমুনা পরীক্ষা হয়। পজিটিভের হার ছিল মাত্র ০.৫৯ শতাংশ।

৩০ এপ্রিলে গিয়ে দেখা যায় পাসিফিকা নামে জনগোষ্ঠীর করোনা(Corona) সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এরপর ওই জনগোষ্ঠীর মোট ২.৯ শতাংশ নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তবে, ১৬ এপ্রিলের পর থেকে গোষ্ঠী সংক্রমণ রুখতে জনবহুল জায়গায় ‘র‍্যান্ডম টেস্টিং’ শুরু হয়। মোট ২ লাখ ৯৪ হাজার ৮০০ টেস্ট করা হয়।

ভৌগোলিক অবস্থান: জনসংখ্যার ঘনত্ব ও ভৌগলিক অবস্থানের কারণে করোনা(Corona) মুক্ত হতে বেশ কিছু সুবিধা পেয়েছে নিউজিল্যান্ড। ২০১৯ তথ্য অনুযায়ী, সে দেশের মোট জনসংখ্যা সাড়ে ৪৯ লাখ। জনঘনত্ব মাত্র ১৮.৩ প্রতি বর্গ কিলোমিটারে। সংক্রমণ রোখার ক্ষেত্রে লকডাউনের বিভিন্ন পদক্ষেপ অত্যন্ত কার্যকারী হয়ে বলে বিশেষজ্ঞরা(Experts) মনে করছেন।

বয়স ও শিক্ষা: করোনার বিরুদ্ধে লড়ার ক্ষেত্রে বয়সের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ২৫ থেকে ৫৪ বছরের মধ্যে নিউজিল্যান্ডে গড় বয়স(Age) ৩৯.৫৮ শতাংশ। ৬৫ উর্ধ্বে ১৫.৫৭ শতাংশ। পাশপাশি যে দেশে শিক্ষার হার ৯৯ শতাংশ, সেখানে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করা আরো সহজ বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

সীমান্ত সিল: নিউজিল্যান্ডের মোট জিডিপির ৫.৮ শতাংশ আসে পর্যটন শিল্প থেকে। বিদেশি মুদ্রা লেনদেনের এটিই অন্যতম মাধ্যম। কিন্তু লকডাউন(Lockdown) ঘোষণার সঙ্গে পুরোপুরি সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়। শুধুমাত্র নিজের দেশে ফেরার অনুমতি দেওয়া হয় নিউজিল্যান্ডের নাগরিকদের। তবে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকা ছিল বাধ্যতামূলক।

নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী আরডার্ন(Ordern) জানিয়েছেন, করোনাকে দূর করতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু এখানেই লড়াই শেষ নয়। আমরা কত দিন করোনা মুক্ত পরিবেশ রাখতে পারি, এটাই এখন সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ। তাই ধীরে ধীরে সব কিছু খুললেও, সেল্ফ কোয়ারেন্টিন থাকা, মাস্ক(Mask) পরা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বাধ্যতামূলক।

Check Also

শাহরুখের ম্যানেজার

প্রায় ৫২ কোটি টাকার মালিক, শাহরুখের ম্যানেজার পূজার কাজ কি

বলিউড বাদশাহ শাহরুখ খানের ম্যানেজার(Manager) পূজা দাদলানি। এই নারী বছরে যেই পরিমাণ অর্থ আয় করেন, ...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *