Home / নারী স্বাস্থ্য / মাসিক কালীন পরিচ্ছন্নতায় মেনস্ট্রুয়াল কাপ ব্যবহার

মাসিক কালীন পরিচ্ছন্নতায় মেনস্ট্রুয়াল কাপ ব্যবহার

আমাদের দেশে অনেক মেয়েরাই তাদের প্রজনন স্বাস্থ্য এবং মাসিকের সময়ে পরিচ্ছন্নতা বা নিরাপদ ব্যবস্থাপনা নিয়ে তেমন সচেতন নয়। পিরিয়ডের(Period) সময়ে পরিচ্ছন্নতা এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকি সম্পর্কে আমাদের সকলকেই জানতে হবে, বুঝতে হবে এবং সতর্ক থাকতে হবে। এখন আমরা মোটামুটি সবাই জানি যে, পুরানো কাপড়, তুলা ও দীর্ঘ সময় ধরে একটাই প্যাড(Pad) ব্যবহার করা কতটা অস্বাস্থ্যকর! মেনস্ট্রুয়াল কাপ(Menstrual cup) নামটা ইতিমধ্যে অনেকেই শুনেছেন। অনেকে হয়তো ব্যবহার করাও শুরু করেছেন। কিন্তু আমাদের দেশের বেশিরভাগ মেয়েদেরই এখনও মেনস্ট্রুয়াল কাপের ব্যবহার সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা নেই। অনেকে এটি ব্যবহার করতে ভয় পায়, বা কিভাবে ব্যবহার করতে হয় সেটাও বুঝতে পারে না। মাসিককালীন পরিচ্ছন্নতা ব্যবস্থাপনায় মেনস্ট্রুয়াল কাপ(Menstrual cup) কিভাবে কাজ করে, ব্যবহারের নিয়ম ও এর সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে জেনে নেই চলুন।

মেনস্ট্রুয়াল কাপ

মাসিক কালীন পরিচ্ছন্নতায় মেনস্ট্রুয়াল কাপ ব্যবহার

মেনস্ট্রুয়াল কাপ কী?
এটি মূলত ফানেলের মতো আকৃতির মেডিক্যাল গ্রেড সিলিকনের কাপ। এটি ভাঁজ করে যোনিপথ(Vagina) দিয়ে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় এবং ভেতরে যেয়ে সেটা প্রসারিত হয়ে জরায়ু মুখে আটকে যায়। মেনস্ট্রুয়াল কাপ(Menstrual cup) স্যানিটারি প্যাডের মতো মাসিকের ব্লাড শুষে নেয় না, বরং এটি কাপের মধ্যে রক্ত(Blood) স্টোর করে বা জমিয়ে রাখে। হেভি ফ্লো চললে নির্দিষ্ট সময় পরপর এই কাপটি বের করে পরিষ্কার করে নিতে হয়। কিন্তু প্যাডের মতো বার বার পাল্টানোর প্রয়োজন হয় না। মাসিকের সময় একজন নারীর দিনে গড়ে ২৫-৩০ মিলি ঋতুস্রাব(Menstruation) হয়, আর কাপের ফানেলে জমা হতে পারে প্রায় ৬০ মিলি রক্ত! বুঝতেই পারছেন, এটি দীর্ঘ সময় পর্যন্ত কোনো ইরিটেশন বা অস্বস্তি ছাড়াই পিরিয়ডের রক্ত জমিয়ে রাখতে পারে। মেনস্ট্রুয়াল কাপ(Menstrual cup) প্রক্রিয়াজাত প্রতিষ্ঠানগুলো বলে থাকে, ঠিকঠাকমতো ব্যবহার ও সংরক্ষণ করলে একটি কাপ আপনি ৮ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত চালাতে পারবেন।

মেনস্ট্রুয়াল কাপ ব্যবহারের আগে কোন বিষয়গুলো খেয়াল করতে হবে?
আপনার বয়স, ভ্যাজাইনার গঠন এবং সন্তানধারণ করেছেন কি না এসব মিলিয়ে আপনাকে কাপের সাইজ নির্ধারণ করতে হবে। কেননা সন্তানের জন্ম দিলে ভ্যাজাইনার পেশি শিথিল হয়ে যায়, তখন বড় সাইজের কাপ ব্যবহারের পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। আবার কিশোরী বয়সে সেটার মাপ আলাদা হবে, সেটাই স্বাভাবিক। আপনার যদি ফাইব্রোয়েডস (Fibroids) বা জরায়ুতে ইনফেকশন থেকে থাকে, তাহলে এটি ব্যবহার না করাই ভালো। হেভি ফ্লো বা স্বাস্থ্যগত কোনো সমস্যা আছে কি না সেটাও এক্ষেত্রে বিবেচনা করতে হবে। মেনস্ট্রুয়াল কাপ((Menstrual cup)) ব্যবহার করা অবশ্যই নিরাপদ। আরামদায়ক ও সাশ্রয়ী হওয়ায় উন্নত দেশগুলোতে এটির ব্যবহার দিন দিন বাড়ছেই। এই ব্যাপারে আপনি একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। অবশ্যই কাপের কোয়ালিটি, কী ধরনের উপাদান দিয়ে তৈরি, মেডিক্যাল গ্রেড(Medical grade) কি না এগুলো খুব ভালোভাবে জেনে তারপর ব্যবহার করবেন।

কিভাবে ব্যবহার করতে হয় মেনস্ট্রুয়াল কাপ?

মেনস্ট্রুয়াল কাপপ্রথমবার ব্যবহারের সময় একটু ভয় লাগতে পারে, কিন্তু এটাতে একবার অভ্যস্ত হয়ে গেলে নিশ্চিন্তে আপনি পিরিয়ডের(Period) সময়টা কাটাতে পারবেন! প্রথমে কাপের খোলা মুখটি উপরে রেখে নীচের অংশ শক্ত করে ধরে যোনিপথে ঢুকিয়ে দিতে হবে। কাপটি আলতো করে সি-শেইপে ( c shape ) ফোল্ড করে বা ভাঁজ দিয়ে নিতে পারেন। ঢোকানোর পর ছাতার মতো খুলে গিয়ে কাপটি আটকে যাবে ভেতরে। তারপর ঘুরিয়ে সেটির মুখ আটকাতে হবে, যাতে ঋতুস্রাবের রক্ত(Menstrual blood) বাইরে না বেরিয়ে আসে! ব্যস, হয়ে গেলো। লিকেজ বা জামাকাপড়ে রক্ত লাগার আর ভয় নেই, বার বার প্যাড পাল্টানোরও কোনো ঝক্কি নেই! টানা ৮ ঘণ্টা ব্যবহার করার পর টান দিয়ে আস্তে করে খুলে নিয়ে ব্লাড(Blood) পরিষ্কার করে নিতে হবে। পিরিয়ডের ফ্লো কেমন সেটার উপর এটি নির্ভর করে। কিভাবে ব্যবহার করতে হয় মেনস্ট্রুয়াল কাপ, এটা নিয়ে ইউটিউবে অনেক টিউটোরিয়ালও পেয়ে যাবেন। মেনস্ট্রুয়াল হাইজিনের সব থেকে আধুনিক সংস্করণ এখন আমাদের সাথেই আছে।

কিভাবে সংরক্ষণ করতে হয়?
প্রতিবার পিরিয়ডের(Period) শেষে এটিকে গরম পানিতে ভালোভাবে ফুটিয়ে নিন। এরপর মুছে নিয়ে তুলে রাখুন। জীবাণুমুক্ত রাখতে এটি শুকনো জায়গায় সংরক্ষণ করতে হবে। আর একটা কথা, পরিষ্কার হাতে এই কাপটি খুলতে, পড়তে বা ধরতে হবে। হাত থেকেও কিন্তু জীবাণুর সংক্রমণ(Infection) হতে পারে। তাই সবসময়ই নিজের হাইজিন নিয়ে সতর্ক থাকবেন।

মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহারের সুবিধা
পিরিয়ডের সময় মেন্সট্রুয়াল কাপ(Menstrual cup) ব্যবহার করা সব থেকে নিরাপদ ও আরামদায়ক বলে মনে করেন পশ্চিমা দেশের নারীরা। বাংলাদেশেও অনেকে এটি ব্যবহার শুরু করেছেন। মেনস্ট্রুয়াল কাপ(Menstrual cup) ব্যবহারের সুবিধাগুলো একনজরে দেখে নেই চলুন।

১) কোনো বিষক্রিয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ এতে কোনো কেমিক্যাল বা সিন্থেটিক উপকরণ থাকে না।

২) ব্যাকটেরিয়াঘটিত যৌনাঙ্গব্যধি হওয়ার ঝুঁকি নেই। তবে নির্দিষ্ট সময় পরপর কাপ বার করে স্টেরিলাইজ(Sterilize) বা জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

৩) ওয়ান টাইম ইনভেস্টমেন্ট বলতে পারেন এটাকে! কেননা একবার মেন্সট্রুয়াল কাপ(Menstrual cup) কিনে রাখলে সেটা আপনি ৮ থেকে ১০ বছর ব্যবহার করতে পারবেন। অবশ্যই এটাকে সাশ্রয়ী ও নিরাপদ ব্যবস্থাপনা বলা যেতে পারে।

৪) এতে পরিবেশেরও কোনো ক্ষতি হয় না। প্যাড কিন্তু মাটিতে মিশে যায় না, আবার অনেক সময় ক্ষতিকর সিলিকা জেল থাকে।

৫) সবথেকে বড় কথা হল, এটা পরে থাকলে আপনি ভুলেই যাবেন যে আপনার মাসিক চলছে! প্যাড(Pad) বদলানোর ঝামেলা নেই, কাপড়ে দাগ লাগার ভয় নেই, জার্নি বা ভ্রমণেও শান্তিতে থাকা যায়।

মেন্সট্রুয়াল কাপের অসুবিধাগুলো কী?
প্রথমবার ব্যবহারের সময় এটা পড়তে বা খুলতে একটু অসুবিধা হতে পারে। আগেই বলেছিলাম যে, জরায়ুতে কোনো ধরনের সমস্যা থাকলে এটা ব্যবহার না করাই ভালো। আবার যেহেতু পিরিয়ড ব্লাড(Period Blood) এই কাপে জমা থাকে, আপনি নিজে সেটা বের করে ধুয়ে ফেলছেন। আপনার যদি এটাতে কোনো অস্বস্তি না থাকে, তাহলে মেন্সট্রুয়াল কাপ(Menstrual cup) ব্যবহারে আর কোনো সমস্যাই নেই!

তাহলে জেনে নিলেন মেন্সট্রুয়াল কাপের ব্যবহার সম্পর্কে! মেনস্ট্রুয়াল কাপ(Menstrual cup) যোনিপথে প্রবেশ করাতে হয় তাই অবিবাহিত মেয়েরা এটি ব্যবহার করতে ইতস্তত বোধ করতে পারে। কিন্তু এই কাপ সুরক্ষিত ও নিরাপদ, সব বয়সের মেয়েরাই ব্যবহার করতে পারে নিশ্চিন্তে! অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিতে হবে। পিরিয়ড(Period) কোনো রোগ বা লুকোচুরির বিষয় নয়! সময় বদলাচ্ছে, আগের থেকে এখনকার নারীদের মধ্যে সচেতনতাও বাড়ছে। পিরিয়ডের সময় পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই সময়ে মেন্সট্রুয়াল কাপ(Menstrual cup) হতে পারে আপনার সব সমস্যার সমাধান। জানুন, বুঝুন ও সুরক্ষিত থাকুন।

Check Also

পিরিয়ডের সময়

পিরিয়ডের সময় হলুদ মেশানো দুধ খাওয়ার ৫টি উপকারিত

পিরিয়ডের সময় হলুদ মেশানো দুধ খাওয়ার ৫টি উপকারিতা। নারীরা যন্ত্রণাদায়ক পিরিয়ড (Period) ক্র্যাম্পে অনেক বেশি ...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *