Home / ত্বকের যত্ন / ব্রণ ও তা থেকে হওয়া কালো দাগ দূর করার ঘরোয়া উপায়

ব্রণ ও তা থেকে হওয়া কালো দাগ দূর করার ঘরোয়া উপায়

ব্রণ এর সমস্যায় জর্জরিত? মুখ ভর্তি দাগ? দূর করতে চান? সমধান রয়েছে আপনার বাড়িতেই। এমনিতে চাইলে চিকিৎসা করে তা দূর করা সম্ভব, কিন্তু তা ব্যয়বহুল ও সময় সাপেক্ষ। তাছাড়া সাইড এফেক্টের ভয়ও থাকে। যদি বলি প্রাকৃতিক উপাদানের সাহায্যে মাত্র ৭ দিনে সমস্যার সমধান হতে পারে! তাহলে তো তা নিশ্চয়ই নিয়ম করে করতে পারবেন?ব্রণ

ব্রণ ও তা থেকে হওয়া কালো দাগ দূর করার ঘরোয়া উপায়

ঠিকই পড়েছেন, মাত্র ৭ দিনে ব্রণ(Acne) দূর হওয়ার পাশাপাশি, তা থেকে হওয়া বিচ্ছিরি দাগ একেবারে হবে ভ্যানিস। শুধু প্রয়োজন টাটকা পাতিলেবুর। পাতিলেবু ব্যবহার করে ব্রণ সম্পর্কিত সমস্ত সমস্যা থেকে পাওয়া যাবে মুক্তি। সমাধান জানার আগে সমস্যার কারন জেনে নিন।

ব্রণ কি?
⇒ ত্বকে থাকা সেবাসিয়াস গ্রন্থি থেকে সেবাম নামক এক প্রকারের তেল(Oil) নিঃসরণ হয়, যা ত্বককে মসৃণ রাখতে সাহায্য করে।

⇒ নানা কারনে, বিশেষ করে তেরো থেকে কুড়ি বছর বয়েসের সময় সীমার মধ্যে মাঝে মাঝেই সেবাসিয়াস গ্রন্থি মুখ বন্ধ হয়ে যায়। এটি অনেকের সারা জীবন হতে দেখা যায়।

⇒ ফলে সেবাম নিঃসরণে বাধা পায়। এটি ত্বকের ভিতরে জমা হয়ে ফুলে গিয়ে ব্রণর আকার ধারন করে।

⇒ ব্রণ হওয়ার সময় গ্রন্থির মুখ বন্ধ থাকার ফলে এটি দেখতে সাদা হয়। আসতে আসতে জমা কোষগুলি কালো হয়ে মুখে কালো দাগ(Black spot) তৈরি করে।

⇒ নানা রকমের জীবাণু(Germ) দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ফলে এটি কখন ফুলে লাল হয়ে যায়, জ্বালা করে। মাঝে মাঝে পুঁজও বের হয়।

ব্রণ কেন হয়?
⇒ কোন একটি কারন না, নানা কারনে ব্রণ(Acne) হতে পারে। ভালো মত হজম না হওয়া থেকে শুরু করে হরমোনের প্রভাবে ব্রন হতে পারে।

⇒ তাছাড়া অতিরিক্ত মাত্রায় দুশ্চিন্তা, সঠিক পরিমানে জল পান না করা ইত্যাদি কারনে ব্রণ(Acne) হয়ে থাকে।

⇒ অনেকের অধিকমাত্রায় ব্রন হওয়ার পিছনে বংশগত কারন থাকে।

⇒ একধরনের জীবাণু যা প্রোপাইনি ব্যাক্টেরিয়াম একনিস নামে পরিচিত তা স্বাভাবিক ভাবে আমাদের লোমের গোড়াতে অবস্থান করে। যা এন্ড্রোজেন হরমোনের অধিক মাত্রায় বেরনোর ফলে সেবাম থেকে ফ্রি অ্যাসিড তৈরি করে। ফলে লোমের গোড়াতে ক্যারোটিন(Carotene) জমে ব্রণর সমস্যা দেখা দেয়।

⇒ এছাড়া যাদের মুখ অধিক মাত্রায় অয়লি তাদের ব্রণর সমস্যা হয় বেশি।

কত প্রকারের ব্রণ হয়?
ব্রণ শুধু মুখে না শরীরের নানা জায়গায় হতে পারে। মূলত পাঁচ প্রকারের ব্রণ(Acne) সাধারণত দেখা যায়।

১. ট্রপিক্যাল একনি
২. প্রিমিন্সট্রুয়াল একনি
৩. একনি কসমেটিকা
৪. স্টেরয়েড একনি
৫. একনি ডিটারজিনেকস

১. ট্রপিক্যাল একনি
পিঠে ও উরুতে সাধারণত ট্রপিক্যাল একনি হয়ে থাকে। বাতাসে আদ্রতার মাত্রা বেশি হলে ও অতিরিক্ত গরমে এই প্রকারের ব্রন হতে দেখা যায়।

২. প্রিমিন্সট্রুয়াল একনি
ঋতুস্রাব বা পিরিয়ডের কারণে অনেক মহিলাদের এই ব্রণ(Acne) হতে দেখা যায়। মাসিকের ৪ থেকে ৫ দিন আগে মুখে অনেকের এই প্রকারের ব্রণ হয়ে থাকে। যা বেশ অধিকমাত্রায় হয়।

৩.একনি কসমেটিকা
অনেকের নানা রকমের বিউটি প্রোডাক্ট নিয়মিত ব্যবহারের ফলে একনি কসমেটিকা হয়। তাই প্রোডাক্ট ব্যবহারের সময় সাবধান থাকবেন। খেয়াল রাখবেন কোন প্রোডাক্ট ব্যবহার করার পরই মুখে ব্রন বেরোয়।

৪. স্টেরয়েড একনি
অনেক ওষুধেই স্টেরয়েড থাকে। যা অনেকদিন ব্যবহার করার ফলে সাইড এফেক্ট হিসেবে ব্রণ(Acne) বের হয়।

৫. একনি ডিটারজিনেকস
অনেকের বারবার সাবান দিয়ে মুখ ধোয়ার অভ্যাস আছে। এর থেকে একনি ডিটারজিনেকস হয়ে থাকে। সাবানে থাকা ক্ষার এই প্রকারের ব্রন হওয়ার মুখ্য কারন।

ব্রণ ও তা থেকে হওয়া বিচ্ছিরি দাগ করুন দূর
ব্রণ থেকে ছুটকারা পেতে ব্যবহার করুন পাতিলেবু। শুধু ব্রণ(Acne) যে দূর হবে তা নয়, ব্রণর থেকে হওয়া কালো দাগও দূর হয়ে যাবে।

কেন পাতিলেবু?
পাতিলেবু কেন ব্যবহার করবেন? নিশ্চয়ই মনে এই প্রশ্ন উঠছে? তাহলে শুনুন এর উত্তর।

পাতিলেবুতে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড ত্বকের উপর অদৃশ্য রক্ষাকবচের মত কাজ করে। যে সমস্ত ব্যাকটেরিয়া বা ক্ষতিকর জীবাণু ব্রন তৈরি হতে সাহায্য করে তাদের ধ্বংস করে এই অ্যাসিড।

মুখের অতিরিক্ত অয়েল কমাতে পাতিলেবু ভীষণ কার্যকরী। তাই ব্রণ(Acne) হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।

এছাড়া সাইট্রিক অ্যাসিডে থাকা উপাদান দাগ দূর করে মুখ উজ্জ্বল করে তোলে নিয়মিত ব্যবহারের ফলে। মুখে পাতিলেবু লাগানোর ফলে ত্বক পরিস্কার ও ব্রণ মুক্ত থাকে।

ব্রণ দূর করতে কিভাবে ব্যবহার করবেন পাতিলেবু?

রোজ সকাল ও বিকেল মুখ ফেস ওয়াস(Face wash) দিয়ে ধোয়ার পর একটি পাতিলেবু দুই ফালি করে নিয়ে মুখে হওয়া ব্রণের অংশে আসতে আসতে লাগান। ১৫ থেকে ২০ মিনিট মত রাখার পর ঠাণ্ডা জল দিয়ে ভালো করে মুখ ধুয়ে নিন। এটি রোজ করুন। ব্রণ(Acne) সেরে যাওয়ার পর সপ্তাহে ৩ দিন এটি নিয়ম করে ব্যবহার করুন। এতে ত্বক ফ্রেস ও উজ্জ্বল থাকবে সব সময়।

ব্রণর কালো দাগ দূর করতে হলে একটি পাতিলেবুর রসের সাথে ১ চা চামচ বিশুদ্ধ মধু মিশিয়ে মুখে লাগান। দাগের উপর ভালো করে লাগান। ২০ মিনিট পর নর্মাল জল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। দাগ দূর না হওয়া অবধি রোজ একবার করে এটি ব্যবহার করুন।

রাতে ঘুমনোর আগে বানিয়ে নিন একটি সহজ ফেস প্যাক। টমেটোর রস, লেবুর রস(Lemon juice) ও ওটমিল মিশিয়ে তা তুলো দিয়ে মুখের বা ব্রন হওয়া জায়গায় লাগান। ৩০ মিনিট মত এটি রেখে ঠাণ্ডা জল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। রোজ রাতে একবার করে এটি ব্যবহার করুন ভালো রেজাল্ট পাবেন গ্যারান্টি।

ব্রণ থেকে মুক্তি পেতে কি কি করবেন?
ব্রণ অনেক সময় খাবার হজম না হওয়ার ফলে হতে পারে। যেসমস্ত খাবার ভালো ভাবে হজম(Digestion) হয় না। তা কম পরিমানে খান। পারলে খাওয়া বন্ধ করে দিন সেসব খাবার।

জল রোজ ৩ থেকে ৪ লিটার মত পান করার চেষ্টা করুন। এটি আপনার শরীরকে নানা ভাবে সাহায্য করার পাশাপাশি ব্রণ(Acne) থেকে মুক্তি দেবে একেবারের মত।

মুখে ব্রন হলে কোন রকমের কসমেটিক ব্যবহার করবেন না ব্রণ(Acne) না সারা অবধি। মেকাপ করবেন না। এতে ক্ষতি বেশি হয়।
যাদের মুখে ব্রন বেশি মাত্রায় হয় তারা অবশ্যই হারবাল প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন।

ব্রণ হলে কি কি করবেন?
ব্রন হলে ঝালমশলা জাতীয় খাবার কম খান।
ফল ও সবুজ শাক সবজি(Vegetable) বেশি মাত্রায় খাওয়ার চেষ্টা করুন।
দিনে দুবার ফেস ওয়াস দিয়ে ভালো ভাবে মুখ পরিস্কার করুন।
মুখে ব্রণ(Acne) থাকলে বাইরে ছাতা নিয়ে বেরন। যাতে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি মুখে না লাগে।
নিজের মুখ পরিষ্কার করার জন্য আলাদা তোয়ালে রাখুন ও পরিষ্কার পরিচ্ছন থাকুন।
মেকাপ ব্যবহার না করাই ভালো, কিন্তু যদি প্রয়োজনে মেকাপ(Makeup) করতেই হয় তাহলে অয়েল বেসড মেকাপ লাগাবেন না। ওয়াটার বেসড মেকাপ অবশ্যই ব্যবহার করবেন।
রাতে কম পক্ষে ৮ ঘণ্টা ঘুমনোর চেষ্টা করবেন।

ব্রণ হলে কি কি করবেন না?
ব্রন হলে তা খুঁটবেন না। এতে মুখে দাগ আরও বিচ্ছিরি হয়ে যায়। অনেকেরই ব্রণ(Acne) খোঁটার অভ্যাস থাকে।
চুলে তেল মাখলে তা যেন কোন ভাবেই মুখে না লাগে তা খেয়াল রাখবেন।
বাইরের ফাস্ট ফুড(Fast food), কোল্ড ডিঙ্কস খাওয়া বন্ধ করতে হবে।
এই সময় আমিষ খাওয়ার পরিমান কমিয়ে দিলেই ভালো।
ডেয়ারি বা দুগ্ধ জাতীয় খাবার যেমন- দুধ, দই, পনির খাবেন না।

ব্রণ হলে কেন একবার চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?
আগেই লিখেছি ব্রন নানা কারণে হয়ে থাকে। তাই অনেকের তা কোন কিছুতেই সারতে চায় না। তাই ব্রণ(Acne) হওয়ার সঠিক কারন জানা খুবই জরুরি।
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরীক্ষা করে কারন জানুন ও তারপর তা নিরাময়ের ব্যবস্থা করুন। না হলে অনেক সময় স্কিনের অতিরিক্ত ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
ডাক্তারের পরামর্শ না নিয়ে বাজারে থাকা ব্রণ(Acne) সারানোর কোন ওষুধ খাবেন না বা কোন ক্রিম(Cream) লাগাবেন না। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে।
ব্রন হলে যদি ডাক্তার দেখানোর প্রয়োজন বোধ করেন তাহলে অবশ্যই স্কিনের ডাক্তার অর্থাৎ চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ দেখাবেন।

সুস্থ থাকুন, নিজেকে এবং পরিবারকে ভালোবাসুন। আমাদের লেখা আপনার কেমন লাগছে ও আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে তবে নিচে কমেন্ট করে জানান। আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্টটি পৌঁছে দিতে দয়া করে শেয়ার করুন। পুরো পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

Check Also

ত্বকের যত্ন

রোজায় ত্বকের যত্ন নিবেন যে ভাবে

রোজায় ত্বকের যত্ন নিবেন যে ভাবে। এবার রোজা এসেছে গরমে। রোজায় দীর্ঘক্ষণ পানাহার বর্জন বা ...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *