সারা দিন রোজা রেখে আমরা যে ইফতার (Iftar) করি, তা হতে হবে স্বাস্থ্যসম্মত। ভাজাপোড়া খাবার শরীরের জন্য ভালো না, জেনেও ইফতারে সেটা না থাকলে অনেকের কাছেই এই পর্বটাকে মনে হয় যেন অসম্পূর্ণ। তাই ইফতারি তৈরির সময় কিছু বিষয় লক্ষ রেখে এ ধরনের খাবার রান্না করা উচিত। বাইরের ভাজাপোড়া খাবার বাদ দিয়ে ঘরেই এসব খাবার তৈরি করুন। অনেকের ধারণা, অল্প তেলে পেঁয়াজু–বেগুনি ভাজলে তেল কম লাগে—ধারণাটা ভুল। বেশি তেলে খাবার ভাজবেন। তেল যেন বেশি গরম হয়ে না যায়, সেদিকেও লক্ষ রাখবেন। ভাজার পর খাবারগুলো কিচেন টিস্যুর ওপর রাখবেন, এতে বাড়তি তেল (Oil) টিস্যু পেপার শুষে নেবে। ইফতারে বিভিন্ন খাবার তৈরি ও পরিবেশনের আগে এ রকম আরও কিছু পরামর্শ মেনে চললে রোজায় সুস্থ থাকবেন।
ইফতারি তৈরির সময় মনে রাখুন এই ১২টি নিয়ম
১। বেগুনিতে বেগুন থাকার কারণে তেল বেশি লাগে। তাই বেগুনের পরিবর্তে পেঁপে, গাজর (Carrot), আলু, পুঁইশাক ইত্যাদি পছন্দমতো কোনো সবজি পাতলা করে কেটে ব্যবহার করতে পারেন।
২। ইফতারের মেনুতে পরিবর্তন রাখুন। একই ইফতারি প্রতিদিন খেতে ভালোও লাগে না। পেঁয়াজু শুধু ডাল দিয়ে না করে মাঝেমধ্যে সবজি মিলিয়ে করতে পারেন। পেঁয়াজু ও বেগুনি—দুটিই ডালের তৈরি। তাই একদিন পেঁয়াজু রাখলে অন্যদিন দিতে পারেন আলুর চপ। রাখতে পারেন বিভিন্ন রকম সবজি–বেসন দিয়ে তৈরি পাকোড়া।
৩। যাঁরা বেগুনি ভালোবাসেন, তাঁরা বেগুনির ব্যাটার (Batter) কয়েক ঘণ্টা আগে তৈরি করে নরমাল ফ্রিজে রেখে দেবেন। ঠান্ডা ব্যাটারে তৈরি বেগুনি বেশি মুচমুচে হবে আর তেলও লাগবে কম। ভাজার পর যদি বেগুনির ব্যাটার থেকে যায়, ঢাকনা দিয়ে ফ্রিজে রেখে দিন। তবে এক দিনের বেশি পুরোনো হলে সেটা না খাওয়াই ভালো।
৪। ভাজার সময় তেলে কোনো দানা থাকলে সঙ্গে সঙ্গে তুলে নেবেন অথবা তেল (Oil) ছেঁকে নেবেন। না হলে দ্রুত তেল পুড়ে খাবার অস্বাস্থ্যকর হয়ে যাবে। আলুর চপ বেসন দিয়ে না ভেজে ডিম, ব্রেডক্রাম্প দিয়ে ভাজুন।
৫। যাঁদের অ্যাসিডিটির সমস্যা আছে, তাঁরা ইফতারের আধা ঘণ্টা পর সামান্য আদাকুচি অথবা সেদ্ধ বাঁধাকপির রস বের করে খেলে উপকার পাবেন।
৬। প্রতিদিন ছোলাভাজা না খেয়ে সেদ্ধ বুট বা ছোলা সালাদের সঙ্গে মিলিয়ে খেতে পারেন। ভিজিয়ে রাখা কাঁচা ছোলা অথবা খোসা ছাড়ানো বুট, লেবু, পুদিনা, টমেটো (Tomato), আদাকুচি মিলিয়ে সালাদ হিসেবেও খেতে পারেন।
৭। সেদ্ধ অথবা ভাপে তৈরি খাবার ইফতারির পদ হিসেবে রাখতে পারেন। যেমন মোমো, ডাম্পলিং, ইডলি, সেদ্ধ নুডলস অথবা পাস্তা দিয়ে তৈরি সালাদ।
৮। দুধ, ডিম দিয়ে তৈরি খাবার, ওটস, চিড়া–কলা—এ ধরনের খাবার ইফতারে রাখতে চেষ্টা করুন।
৯। ঘরে তৈরি ফলের রস (Fruit juice), ডাবের পানি পানীয় হিসেবে রাখুন। তবে মিষ্টি ফলে আলাদা চিনি ব্যবহার না করাই ভালো। লেবু–পানির ডিটক্সও খেতে পারেন। শরীর ফ্রেশ থাকবে। ফল, ফলের রস অথবা ফলের সালাদ খাবেন।
১০। সবজি খিচুড়ি, হালিম, মোরগ পোলাও, তেহারির মতো ভারী খাবার ইফতারে রাখলে অবশ্যই পরিমাণে কম খেতে হবে। সে ক্ষেত্রে ছোট এক বাটি পরিমাণ খাবেন। এমন ভারী খাবার থাকলে সঙ্গে টক দই (Sour yogurt) অথবা টক দই দিয়ে তৈরি সালাদ রাখবেন।
১১। ভরপেট ইফতারি কখনোই খাবেন না।
১২। ইফতার থেকে সাহ্রি পর্যন্ত ৬–৮ গ্লাস পানি অল্প অল্প করে খাবেন। এতে শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ হয়ে যাবে।
সুস্থ থাকুন, নিজেকে এবং পরিবারকে ভালোবাসুন। আমাদের লেখা আপনার কাছে কেমন লেগেছে এবং আপনার যদি কোনো প্রশ্ন অথবা মতামত থেকে থাকে তবে নিচে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন। আর আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্টটি পৌঁছে দিতে শেয়ার করুন। সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।