কিছু খেলেই বুক জ্বালাপোড়া করার সমস্যা দেখা দেয় অনেকেরই। বুকের মাঝের অংশ জ্বালাপোড়া করা, ঢেঁকুর ওঠা, মুখে টক লাগা, পেট ফাঁপা, বমি ভাব, বারবার কাশি বা হেঁচকি, শ্বাসে দুর্গন্ধ ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিড রিফ্লাক্সে। চিকিৎসক তাসনিম যারা একটি ভিডিওতে গ্যাস্ট্রিক হওয়ার কারণ ও ঘরোয়া চিকিৎসার ব্যাপারে বলেছেন।
গ্যাস্ট্রিক সমস্যার ঘরোয়া চিকিৎসা জেনে নিন
কেন হয় গ্যাস্ট্রিক?
আমরা যখন কিছু খাই, সে খাবার পাকস্থলীতে যায়। পাকস্থলী কিছু অ্যাসিড এবং আরও কিছু জিনিস তৈরি করে খাবার হজম করার জন্য। অ্যাসিড এবং খাবার দুটোই পাকস্থলী থেকে নিচের দিকে নামতে থাকে। তবে যদি অ্যাসিড নিচের দিকে না মেনে গলার দিকে বা উপরের দিকে উঠতে থাকে, তখন আমরা বুকে জ্বালাপোড়া অনুভব করি। অ্যাসিড উপরের দিকে উঠে আসার এই ব্যাপারটি কোনও কারণ ছাড়াই হতে পারে, আবার কিছু কিছু জিনিস এই সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে বা বাড়িয়ে দিতে পারে। নির্দিষ্ট কিছু খাবার এই সমস্যা প্রকট করতে পারে।
কেউ কেউ অতিরিক্ত মসলাদার খাবার হজম করতে পারেন না, কারোর আবার কফি খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বাড়ে। যারা ধূমপান করেন, তাদের এই সমস্যা বেশি দেখা দেয়। ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকা কিংবা টেনশনের কারণেও বাড়তে পারে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা। গর্ভবতীরা এই সমস্যায় ভোগেন প্রায়শই। যাদের ‘হায়াটাস হার্নিয়া’ নামের রোগ আছে, যেখানে পাকস্থলীর কিছু অংশ বুকের উপর চলে আসে, তাদের বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যা দেখা দেয়। নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ বাড়াতে পারে গ্যাস্ট্রিক। তবে ওষুধের কারণে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বাড়ছে এমন মনে করলে নিজ থেকে ওষুধ বন্ধ করবেন না। অবশ্যই চিকিৎসককে জানাবেন।
বুক জ্বালাপোড়া সমস্যার ঘরোয়া চিকিৎসা
১। একবারে পেট ভরে বেশি খাবার খেয়ে ফেললে গ্যাস্ট্রিক বা বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যা বেশি হয়। তাই একবারে বেশি খাবার খাবেন না। অল্প অল্প করে সারাদিনের জন্য খাবার ভাগ করে তারপর খান। একবারে বেশি খাবার খেলে পাকস্থলী ফুলে ওঠে বা প্রসারিত হয়। এতে অ্যাসিড উপরের দিকে উগড়ে আসতে পারে।
২। খাবার খাওয়া নিয়ে অনিয়ম করবেন না। সময় মতো খাবার না খেলে পাকস্থলীর আরেকটি রোগ গ্যাস্ট্রাইটিস হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এই রোগে পাকস্থলীর গায়ে ক্ষত তৈরি হয় যা থেকে ইনফেকশন হতে পারে। এই রোগ হলেও পেটে জ্বালাপোড়ার মতো ব্যথা হতে পারে।
৩। একেক জনের জন্য একেক ধরনের খাবার গ্যাস্ট্রিক তৈরি করে। যেসব খাবার গ্যাস্ট্রিক তৈরি করে সেসব খাবার এড়িয়ে চলুন। মসলা দেওয়া খাবার, চপ, পুড়ি, মুড়ি-চানাচুর, চটপটি এমনকি প্রয়োজনে ভাতডালও এড়িয়ে চলুন।
৪। রাতের খাবার আগে আগে সেরে ফেলুন। ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত তিন-চার ঘণ্টা আগে রাতের খাবার সেরে ফেলুন। কারণ ভরপেটে চিত হয়ে শুলে পাকস্থলী থেকে অ্যাসিড উপরের দিকে উঠে আসার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৫। ঘুমানোর সময় মাথা আর বুক ১০ থেকে ২০ সেন্টিমিটার উঁচুতে রাখতে হবে কোমরের চেয়ে। এটা পাকস্থলীর অ্যাসিড উপরে ওঠা থামাবে। বালিশ দিয়ে উঁচু করলে শুধু মাথা উঁচু হয়। এজন্য খাটের নিচে বা তোষকের নিচে কিছু একটা দিয়ে খাটের একটা দিক উঁচু করে নিন এবং সেই দিকে মাথা দিন। যাদের রাতের বেলা জ্বালাপোড়ার সমস্যা বেশি হয়, তাদের জন্য এই ধাপটা গুরুত্বপূর্ণ।
৬। ওজন বেশি হলে সেটা কমানোর চেষ্টা করুন। অতিরিক্ত ওজন অনেক ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করে। ডায়াবেটিস, হার্টের রোগসহ অনেক রোগ ওজনের সাথে সম্পর্কযুক্ত। তাই বাড়তি মেদ ঝরিয়ে ফেলুন। এতে বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যাও কমবে।
৭। ধূমপান বন্ধ করতে হবে। ধূমপান বন্ধ করলে এই সমস্যা অনেকাংশেই কমে যায় বলে দাবি করছে কিছু গবেষণা।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?
১। যদি বারবার এই সমস্যা দেখা দেয়, প্রতিদিনের কাজে ব্যাঘাত ঘটায়, তিন সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যা থাকে, বয়স যদি ৫৫ বা তার বেশি হয়ে থাকে- তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
২। গ্যাস্ট্রিকের পাশাপাশি দ্রুত ওজন কমে যাওয়া, খাবার গিলতে সমস্যা হওয়া, বারবার বমি হওয়া, বমি বা পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া, পায়খানা কালো হওয়া, বমির সাথে কফির দানার মতো কিছু যাওয়া, পেটে চাকার মতো কিছু লক্ষ করা, আয়রনের অভাবজনিত রক্তশূন্যতায় ভোগার সমস্যা লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
সুস্থ থাকুন, নিজেকে এবং পরিবারকে ভালোবাসুন। আমাদের লেখা আপনার কাছে কেমন লেগেছে এবং আপনার যদি কোনো প্রশ্ন অথবা মতামত থেকে থাকে তবে নিচে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন। আর আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্টটি পৌঁছে দিতে শেয়ার করুন। সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।