Home / স্বাস্থ্য টিপস / মধু সেবনের ১২টি আশ্চর্য উপকারিতা জেনে নিন

মধু সেবনের ১২টি আশ্চর্য উপকারিতা জেনে নিন

আশা করি সবাই ভাল আছেন। আজ আপনাদের মাঝে অরেকটি আর্টিকেল নিয়ে হাজির হলাম। আজ আপনাদের জানাবো মধু (Honey) সেবনের ১২টি আশ্চর্য উপকারিতা সম্পর্কে। মধু শুধুমাত্র একটি উপকারী খাদ্য নয়, পন্য ও ঔষধ(Medicine) বটে। জন্মের পর বাচ্চাদেরকে নানা দাদীরা মখে মধু(Honey) দেয় নাই এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন বা নেই বললেই চলে। আদিমকাল বা প্রাচীনকাল থেকে মানুষ প্রাকৃতিক খাদ্য(Food) হিসেবে, মিষ্টি হিসেবে, এবং চিকিৎসার উপাদান হিসাবে মধুর ব্যবহার করে আসছে। আমাদের শরীরের সুস্থতায় মধুর উপকারিতা অতুলনীয়।মধু

মধু সেবনের ১২টি আশ্চর্য উপকারিতা জেনে নিন

এবার আসুন জেনে নাওয়া যাক মধু কি?
সাধারণভাবে বলতে গেলে মধু (Honey) হচ্ছে একটি তরল মিষ্টি জাতীয় আঠালো পদার্থ, যা সাধারণত মৌমাছিরা ফুল থেকে পুষ্পরস হিসেবে সংগ্রহ করে তাদের মৌচাকে জমা করে রাখে। পরবর্তীতে জমাকৃত এই পুষ্পরস প্রাকৃতিক নিয়মেই মৌমাছি বিশেষ প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ মধুতে রূপান্তর হয়ে যায় এবং কোষ বদ্ধ অবস্থায় মৌমাছিরা মৌচাকে সংরক্ষণ করে। বিশদ ভাবে ব্যাখ্যা করতে গেলে বলতে হবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য মতে মধু(Honey) হচ্ছে এমন একটি অগাজানোশীল মিষ্টি জাতীয় পদার্থ যা সাধারানত মৌমাছিরা ফুলের নেকটার অথবা জীবন্ত গাছপালার নির্গত রস থেকে সংগ্রহ করে মধুতে রূপান্তর করে এবং আরও সুনির্দিষ্ট কিছু উপাদান যোগ করে মৌচাকে সংরক্ষণ করে। এটাই মধু(Honey) ।

খাদ্য হিসাবে মধুঃ
প্রাচীনকাল থেকেই মধু ঔষধ এবং খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিশেষ করে চাইনিজরা প্রতিদিন সকালে তারা দুধ(Milk) ও মধু মিশিয়ে সেটা রুটি দিয়ে খেতো। নিয়মিত মধু (Honey) খাওয়া চাইনিজদের একটি অভ্যাসে পরিণত হয়েছিলো। সুধু চাইনিজরা না, আমাদের দেশেও কেউ কেউ হালকা গরম পানিতে মধু দিয়ে অথবা চায়ের সাথে মধু দিয়ে খায়। পরিসংখ্যান এর দিকে দেখলে দেখা যাবে যে, বিশ্বের প্রায় বেশিরভাগ দেশেই, বিশেষ করে এশিয়ান দেশ গুলোতে মধু খাওয়ার প্রচলণ অনেক বেশি। আপনি যদি সকাল বেলা এক চামচ মধু (Honey) খান তাহলে দিনের শুরুটাকে মধুর মত মিষ্টি করে দিবে। শুধু তাই নয়, মধুর আছে অবিশ্বাস্য কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা।

মধুতে যেসব উপাদান বিদ্যমানঃ
সুনতে খুব অবাক লাগলেও এটা সত্য যে, মধুতে প্রায় ৪৫টিও বেশি খাদ্য উপাদান থাকে। সাধারণত পুষ্টি উপাদান হিসাবে ফুলের পরাগের মধুতে থাকে ২৫ থেকে ৩৭ শতাংশ গ্লুকোজ, ৩৪ থেকে ৪৩ শতাংশ ফ্রুক্টোজ, ৫-১২ শতাংশ মন্টোজ, ০.৫ থেকে ৩.০ শতাংশ সুক্রোজ থাকে। সুধু তাই নয় আরো থাকে ২৮ শতাংশ খনিজ লবণ(Mineral salt), ২২ শতাংশ অ্যামাইনো এসিড এবং ১১ ভাগ এনকাইম। এতে সাধারণত কোন চর্বি ও প্রোটিন(Protein) নেই। প্রতি ১০০ গ্রাম মধুতে থাকে ২৮৮ গ্রাম ক্যালরি।

যেসব ফুল থেকে মধুঃ
সাধারণভাবে বিভিন্ন ফুল থেকে মধু (Honey)হয় তার মধ্যে কিছু হল – সরিষা ফুল, লিচু, সুন্দর বন, কালজিরা থেকে মধু আহরিত হয়। এ ছাড়াও রয়েছে ধনিয়া ফুল, গুজি তিল ও তৃষি থেকেও মধু(Honey) উৎপাদিত হয়ে থাকে। প্রায় সব উপাদান বা ফুল থেকে যে মধু আসে তার সবগুলার গুনাগুন প্রায় একই।

সবচেয়ে সেরা মধুঃ
নিউজিল্যাণ্ডের মানুকা হানি বাজারে প্রাপ্য সকল মধুর চেযে বেশী ঔষধি গুণ সম্পন্ন গণ্য করা হয়। সাধারানত মানুকা নামীয় এক প্রকার ঝোপ জাতীয় উদ্ভিদের ফুল থেকে উৎপন্ন মধু(Honey) “মানুকা হানি” নামেও পরিচিত।

খাটি মধুর কিছু বৈশিষ্ট্যঃ
মধুর অনেক কিছু বৈশিষ্ট্য আসে। তবে খাঁটি মধুর কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য আসে তা হল-

১। খাঁটি মধুতে কখনো কোন কটু গন্ধ থাকে না।

২। সব থেকে মজার কথা হল মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক কোনো বিষাক্ত উপাদান প্রাকৃতিক গাছে থাকলেও তার কোন প্রভাব মধুতে থাকে না।

৩। মধু সংরক্ষণে কোনো প্রকার পৃজারভেটিভ জাতীয় উপাদান ব্যবহৃত হয় না। কারণ মধু(Honey) নিজেই পৃজারভেটিভ গুণাগুণ সম্পন্ন পুষ্টিতে ভরপুর একটি খাদ্য।

৪। খাঁটি মধু (Honey) উৎপাদন, নিষ্কাশন, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাত ও বোতলজাতকরণের সময় অন্য কোনো প্রকার পদার্থের সংমিশ্রণ প্রয়োজন হয় না।

৫। আপনি খাঁটি মধু পরীক্ষা করতে চাইলে একটা কাজ করতে পারেন।আপনি খাটি মধু পানির গ্লাসে ড্রপ আকারে ছেড়ে দিন খাঁটি মধু (Honey)হবে ড্রপ অবস্থায়ই গ্লাসের নিচে চলে যাবে।

মধুর যত উপকারিতা-

আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) থেকে বর্ণিত, মধু মৃত্যু ব্যাতিত যেকোনো রোগ দূর করতে সক্ষম। আসুন এবার জেনে নাওয়া যাক মধুর উপকারিতা

১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়- সাধারানত প্রাকিতিক মধুতে আছে প্রচুর পরিমাণে মিনারেল(Minerals), ভিটামিন ও এনজাইম যা শরীরকে বিভিন্ন অসুখ বিসুখ থেকে রক্ষা করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও প্রতিদিন সকালে এক চামচ মধু (Honey)খেলে ঠান্ডা লাগা, কফ, কাশি ইত্যাদি সমস্যা কমে যায়। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা(Immunity) বাড়াতে হলে প্রতিদিন হালকা গরম পানির সাথে মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে খান।

২. ওজন কমায় – আপনি যদি প্রতিদিন সকালে মধু (Honey) খান তাহলে আপনার বাড়তি ওজন কমবে। বিশেষ করে যদি পারেন সকালে খালি পেটে হালকা গরম পানিতে লেবুর রস(Lemon juice) ও মধু মিশিয়ে খান এতে করে বেশ খানিকটা ওজন কমে যায় কিছুদিনের মধ্যেই। এছাড়াও এভাবে প্রতিদিন নিয়মিত মধু(Honey) খেলে লিভার পরিষ্কার থাকে, শরীরের বিষাক্ত উপাদান গুলো বের করে দেয় এবং শরীরের মেদ গলে বের হয়ে যায়।

৩. বুদ্ধি বাড়ে- মধু যে শুধু আপনার কায়িক শক্তি বাড়ায়, তা নয়। আপনি নিয়মিত প্রতিদিন রাতে শোয়ার আগে এক চামচ মধু খাবেন, কারন ঘুমানোর আগে এক চামচ মধু(Honey) মস্তিষ্কের কাজ সঠিক ভাবে চালাতে খুব সাহায্য করে ফলে আপনার মস্তিষ্কের শক্তি তথা বুদ্ধির জোর বেড়ে যাবে। যে কোনো কাজে কর্মে আপনার মগজ আগের চেয়ে বেশি কাজ করবে। যাদের সাধারণত মাথা খাটিয়ে কাজ করতে হয়, তাদের জন্য মধু(Honey) এনে দেবে নতুন উদ্যম ও সৃষ্টিশীলতা।

৪. হৃৎপিণ্ডের সমস্যার ঝুঁকি হ্রাস করতে মধু- মধুর সাথে দারচিনির গুঁড়ো মিশিয়ে খেলে তা রক্তনালীর বিভিন্ন সমস্যা দূর করে এবং রক্তনালী(Blood vessels) পরিষ্কার করতে সাহায্য করে এবং রক্তের খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ ১০% পর্যন্ত কমিয়ে দেয়। মধু ও দারচিনির এই মিশ্রণ নিয়মিত খেলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুকি অনেকাংশে কমে যায় এবং যারা ইতিমধ্যেই একবার হার্ট অ্যাটাক(Heart attack) করেছেন তাদের দ্বিতীয়বার অ্যাটাকের ঝুকি কমে যায়।

৫. ব্যথা নিরাময়ে- আপনার শরীরের কি জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যথা? প্রচুর বাতের ওষুধ খেয়েও আজও কোনো ফল পাননি? তাহলে আজ থেকে মধু (Honey) খাউয়া শুরু করুন। আপনার শরীরে যে অবাঞ্ছিত রসের কারণে বাতব্যামোর জন্ম, সে রস অপসারিত করতে মধু বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। কিছু দিন পর আপনার বাত ব্যাথা সেরে যাবে।

৬. হজমে সাহায্য করে- যাদের নিয়মিত হজমের সমস্যায় ভুগেন তারা প্রতিদিন সকালে নিয়মিত মধু খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। মধু আপনার পেটের অম্লীয়ভাব কমিয়ে হজম(Digestion) প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে। হজমের সমস্যা অনেকাংশে দূর করার জন্য মধু খেতে চাইলে প্রতিবার ভারী খাবারের আগে এক চামচ মধু(Honey) খেয়ে নিন। বিশেষ করে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক চামচ মধু খান।

৭. শক্তি বাড়াতে- মধুতে আছে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক চিনি। এই প্রাকৃতিক চিনি আপনার শরীরে শক্তি যোগায় এবং শরীরকে কর্মক্ষম রাখতে সাহায্য করে। বিশেষ করে যাদের মিষ্টি খাবারের নেশা অনেক আছে তারা অন্য মিষ্টি খাবারের বদলি হিসাবে মধু খেয়ে নিন। কিছু মানুষ আছে যারা সারাক্ষন দূর্বলতায় ভোগেন এবং দেখা যায় এই সমস্যা দূর করার জন্য তারা কিছুক্ষন পর পর চা কফি খায়। এই সমস্যায় যারা ভুগছেন তারা প্রতিদিন সকালে নিয়মিত এক চামচ মধু(Honey) খেয়ে নিন এবং সারা দিন সবল থাকুন।

৮. যৌন দুর্বলতায়- সাধারণত পুরুষদের মধ্যে যাদের যৌন দুর্বলতা রয়েছে তারা যদি প্রতিদিন মধু ও ছোলা মিশিয়ে খেতে পারেন। তাহলে একটা সময় বেশ উপকার পাবেন। প্রখ্যাত কিছু মধু বিজ্ঞানীদের মতে দৈনিক লিঙ্গে মধু (Honey)মাখলে লিঙ্গ শক্ত ও মোটা হয় এবং সহবাসে দীর্ঘসময় পাওয়া যায়। নিয়মিত মধু সেবন করলে ধাতু দুর্বল (ধ্বজভঙ্গ) রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

৯. রক্ত পরিষ্কারক- এক গ্লাস হালকা গরম পানির সাথে এক বা দুই চামচ মধু(Honey) এবং এক চামচ লেবুর রস মেশান। পেট খালি করার আগে প্রতিদিন এই মিশ্রিত পানি খান। এটা রক্ত পরিষ্কার করতে অনেক সাহায্য করে। তাছাড়া রক্তনালী গুলোও পরিষ্কার করে থাকে।

১০. হাঁপানি রোধে- আপনি যদি পারেন আধা গ্রাম গুঁড়ো করা গোলমরিচের সাথে সমপরিমাণ মধু(Honey) এবং আদা মেশান। আপনি দিনে অন্তত তিন বার এই মিশ্রিত পানি খান। এটা হাঁপানি রোধে সহায়তা করবে।

১১. গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে মুক্তি- আপনার হজম সমস্যার সমাধানেও কাজ করে মধু। একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে মুক্তি পেতে একজন ব্যক্তি প্রতিদিন নিয়মিত তিন বেলা দুই চামচ করে মধু(Honey) খেতে পারে। এতে করে গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

১২. আয়ু বৃদ্ধি করে- গবেষণায় আরও দেখা গেছে, নিয়মিত যারা মধু(Honey) ও সুষম খাবারে অভ্যস্ত তুলনামূলক ভাবে সেসব ব্যাক্তিরা বেশি কর্মক্ষম ও নিরোগ হয়ে বেঁচে থাকে।

সুস্থ থাকুন, নিজেকে এবং পরিবারকে ভালোবাসুন। আমাদের লেখা আপনার কেমন লাগছে ও আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে তবে নিচে কমেন্ট করে জানান। আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্টটি পৌঁছে দিতে দয়া করে শেয়ার করুন। পুরো পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

Check Also

এনার্জি

এই গরমে ক্লান্তি দূর করে এনার্জি দেবে যেসব খাবার

আবহাওয়ার এই অসহনীয় গরমে শরীরে দেখা দিতে পারে অবসাদ-ক্লান্তি (Tiredness)। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে বড় ...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *