বিয়ে হচ্ছে দুটি মনকে এক করে নিয়ে সারাজীবন একসাথে চলা। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় বিয়ের কিছুদিন পর সাংসারিক জীবনে অশান্তি লেগে থাকে। সংসার মানে গোলাপের বিছানা নয়; সেখানে কাঁটার খোঁচাও খেতে হয়। বিয়ের পর রোমাঞ্চকর সময় কিংবা সপ্তাহের ডেট নাইট আর থাকে না। তাই সংসারী হয়ে হতভম্ব হতে না চাইলে কয়েকটি বিষয় আগেই মাথায় রাখুন।
বিয়ের আগে যে ১৫টি বিষয় জানা খুবই জরুরি
বিয়ে হচ্ছে জীবনের একটি বিশেষ মুহূর্ত। এটি একটি সামাজিক বন্ধন। যাতে দুটি মানুষ পরস্পর পরস্পরের প্রতি দায়বদ্ধ থাকে। বিয়ে সামাজিক ও শরিয়তসম্মত বন্ধন। মানুষের চরিত্রকে সুন্দর ও নিরাপদ রাখতে, অবৈধ দৃষ্টি থেকে চোখকে হেফাজত করতে এবং লজ্জাস্থানের নিরাপত্তা ও সংরক্ষণে বিয়ের গুরুত্ব অপরিসীম।
আসুন জেনে নেই বিয়ের আগে যা যা জানা জরুরী-
১। পাত্র/ পাত্রী পছন্দের ক্ষেত্রে মুরুব্বি/ আত্মীয়-পরিজনের সাহায্য নিন, পরামর্শ করুন। তবে নিজে পাত্র/ পাত্রীকে সরাসরি দেখুন এবং কথাবার্তা বলে সিদ্ধান্ত নিন। (০২) বিয়ের আগে যৌনাচার, একসাথে থাকা বা লিভ টুগেদার একটি বিকৃত চর্চা। এ ধরনের চর্চা পরিণামে আপনার হতাশাই বাড়াবে। (০৩) সমসামাজিক, সমসাংস্কৃতিক, সম-আর্থিক ও সমধর্মীয় পরিমণ্ডলে বিয়ে করুন।
৪। পাত্র/ পাত্রীর সম্পদ ও সামাজিক অবস্থানের চেয়েও গুরুত্ব দিন সুশিক্ষা, আদর্শ, মূল্যবোধ ও নৈতিকতাকে। দেখুন তিনি মাদক, ঋণ ও ভার্চুয়াল ভাইরাসসহ সব ধরনের আসক্তি থেকে মুক্ত কিনা।
৫। নবীজী (স) বলেন, কোনো নারীকে চারটি যোগ্যতার জন্যে বিয়ে করা যায়। ১. সম্পদ ২. বংশমর্যাদা ৩. রূপ ৪. গুণ। এমন নারী খোঁজ করো যার গুণ আছে। অন্য বিবেচনায় বিয়ে করলে তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
৬। বিয়ে করার সাথে উপার্জনের কোনো সম্পর্ক নেই। শারীরিক-মানসিক ও আইনগতভাবে সাবালক ছেলে বা মেয়ে তার প্রয়োজনমতো সময়ে বিয়ে করতে পারে।
০৭। পাত্র/ পাত্রীর নিকটাত্মীয় বা প্রতিবেশী হিসেবে কেউ আপনার কাছে জানতে চাইলে আপনি যতটুকু জানেন, বোঝেন তার সম্পর্কে ততটুকুই বলুন। অতি প্রশংসা বা অহেতুক নিন্দা-কোনোটিই করবেন না।
৮। পাত্র/ পাত্রীর বায়োডাটা ও ছবি দেখেই পছন্দ বা নাকচ করবেন না। অভিভাবকদের কেউ তার সাথে দেখা করে এলে সে অভিজ্ঞতা শুনুন। তারপর নিজে দেখা করবেন কিনা সিদ্ধান্ত নিন। ছবি আর কাগজের তথ্যের চেয়ে বাস্তব মানুষটির সাথে সাক্ষাৎ আপনার সিদ্ধান্ত নেয়াকে সহজ করবে।
৯। ছেলে ও মেয়েপক্ষের বায়োডাটা দেখে উভয়ের সম্মতি থাকলে এপয়েন্টমেন্টের ভিত্তিতে সামনাসামনি দেখার ব্যবস্থা করুন। হঠাৎ করে ছেলে বা মেয়ের কর্মক্ষেত্রে/ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে তাকে অপ্রস্তুত করবেন না।
১০। পাত্র/ পাত্রী তার নিজের বাসায় মানুষ হিসেবে কেমন, এ বিষয়ে জানতে তার নিকটাত্মীয়/ প্রতিবেশীর কাছে খোঁজ নিন।
১১। মুসলিম বিয়ের ক্ষেত্রে দেনমোহর বরপক্ষের সাধ্যের মধ্যে রাখুন। দেনমোহর স্বামীর জন্যে একটি দায় বা ঋণ। তাই দাম্পত্য জীবন শুরুর আগে দেনমোহর পুরোপুরি শোধ করুন। বাস্তব কারণে সম্ভব না হলে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে স্ত্রীকে তা পরিশোধ করুন।
১২। কোনো কারণে অতিরিক্ত মেহমান চলে এলে অস্থিরতা বা বিরক্তি প্রকাশ করবেন না। একে বাড়তি বরকতের উপলক্ষ মনে করুন।
১৩। দাওয়াত করলে পুরো পরিবারকে করুন। পরিবারের একজন বা দুজন বা শুধু স্বামী-স্ত্রীকে দাওয়াত দেয়ার মানসিকতা পরিহার করুন। নিজেরাও পারতপক্ষে এ ধরনের দাওয়াতে অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকুন।
১৪। বিয়ের পরে স্বামী/ স্ত্রী ছাড়াও দুই পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে সময় কাটান। তাদেরকে বোঝার চেষ্টা করুন। সুসম্পর্ক স্থাপন করুন।
১৫। বিবাহিত জীবনকে প্রাণবন্ত রাখার মূল হাতিয়ার হল দুজন দুজনের চেষ্টাকে মূল্যায়ন করা। আপনার জন্য আপনার সঙ্গীর ত্যাগ ও পরিশ্রমকে গুরুত্ব দিন।
সুস্থ থাকুন, নিজেকে এবং পরিবারকে ভালোবাসুন। আমাদের লেখা আপনার কেমন লাগছে ও আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে তবে নিচে কমেন্ট করে জানান। আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্টটি পৌঁছে দিতে দয়া করে শেয়ার করুন। পুরো পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।