Home / স্বাস্থ্য টিপস / এক কোয়া রসুনের শক্তি কত জানেন কী?

এক কোয়া রসুনের শক্তি কত জানেন কী?

আমাদের দৈনন্দিন জীবনের খাদ্য তালিকার মধ্যে রসুন(Garlic) অন্যতম। তরকারীতে কিংবা অন্যান্য ভাবে আমরা রসুনের ব্যবহার করে থাকি।এদিকে গবেষণায় বলা হয়েছে শারীরিক সমস্যায় রসুনের উপকারীতা অনেক। খালি পেটে রসুন খাওয়া হলে এটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিকের মতে কাজ করে। সকালে নাস্তার আগে রসুন খেলে এটি আরও কার্যকরীভাবে কাজ করে। যক্ষা অথবা টিবি জাতীয় রোগের জন্য রসুন(Garlic) বেশ উপকারী। সে ক্ষেত্রে সারাদিনে একটি সম্পূর্ণ রসুন কয়েক অংশে বিভক্ত করে বার বার খেতে পারেন। অন্যদিকে উচ্চ রক্তচাপের জন্য এই রসুনের জুরি নেই। রসুন খাওয়ার ফলে শরীরে উচ্চ রক্তচাপ(High blood pressure) করে এবং পরিবর্তন আসে। রসুন যক্ষ্মা, নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিস, ফুসফুসের কনজেশন, হাপানি, হুপিং কাশি ইত্যাদি প্রতিরোধ করে।রসুনের শক্তি

এক কোয়া রসুনের শক্তি কত জানেন কী?

বিশেষজ্ঞদের মতে রসুন প্যারাসাইট, কৃমি পরিত্রাণ, জিদ, সাঙ্ঘাতিক জ্বর, ডায়াবেটিস, বিষণ্ণতা এবং ক্যান্সার এর মত বড় বড় রোগ প্রতিরোধ করে।

সতর্কবার্তা: যাদের রসুন খাওয়ার ফলে এলার্জি(Allergies) হবার আশঙ্কা রয়েছে বা হয় তারা অবশ্যই কাঁচা রসুন খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। যাদের রসুন খাওয়ার ফলে মাথা ব্যথার সমস্যা হয়, বমির প্রাদুর্ভাব হয় বা অন্য কোন সমস্যা দেখা যায় তাদের জন্য কাঁচা রসুন না খাওয়াই ভালো।

সকালে খালি পেটে রসুন? ইশ! ওই বিচ্ছিরি গন্ধের কথা ভেবেই নিশ্চয়ই আপনি নাক সিটকোচ্ছেন? সকালে উঠেই এতো ভালো ভালো খাবার থাকতে কিনা শেষে রসুন খেয়ে বসে থাকবেন! ভাবলেই গা-টা গুলিয়ে উঠছে তো? ভাবছেন নিশ্চয়ই বিদঘুটে গন্ধওয়ালা ওই বস্তুটা সাতসকালে কাঁচা খাবার থেকে তো রান্না করে খেয়ে ফেলা অনেক সহজ! রসুনকে রান্নায় দিলে তার অর্ধেক গুণ, যেমন কিছু ফ্যাটি অয়েল তার কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। ফলে রসুন কাঁচা খেলে যেমন উপকার মেলে, রান্নায় দিয়ে খেলে তার সিকি শতাংশ উপকারও আপনি পাবেন না। রসুন(Garlic) এক দারুণ পেনিসিলিন জাতীয় মসলা। রসুন মানুষের দেহে এমন কোনো রোগ বালাই নেই যার প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে না। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথ ওয়েবসাইট ‘মেডলাইন প্লাস’ জানিয়েছে, বিশ্বের অসংখ্য মানুষ কোলন, রেক্টাল, পাকস্থলী, ব্রেস্ট, প্রোস্টেট, মূত্রথলি ও ফুসফুসের ক্যান্সার প্রতিরোধে রসুন ব্যবহার করে থাকেন। রসুন কারো কারো কাছে মিনারেলসের মিনি স্টোর। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট(Carbohydrates), প্রোটিন, ফসফরাস, অ্যালুমিনিয়াম, ক্যালসিয়াম, রিবোফ্লাভিন, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, ক্লোরিন, সেলেনিয়াম, জিংক ও ভিটামিন ‘সি’। এটি চমত্‍কার অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিসেপটিক, অ্যান্টি-ফাংগাল, অ্যান্টি-ভাইরাল হিসেবে কাজ করে, যা আমাদের বিভিন্ন রোগবালাই থেকে দূরে রাখে।

সকালে খালি পেটে কাঁচা রসুন(Garlic) কেন খাবেন তাহলে আসুন জেনে নেয়া যাক:- প্রতিরোধক ও প্রতিষেধক:- রসুনে থাকা ভিটামিন ‘সি’র কথা বিশেষভাবে বলতে হয়। কেননা এই ভিটামিন স্কার্ভি রোগের প্রতিরোধক ও প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। একই সঙ্গে তা রক্তনালি নমনীয় রাখে।

রক্ত চলাচলে সহায়তা: রসুনে ‘অ্যাজোইন’ নামক এক রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে। এ পদার্থ নির্বিঘ্নে রক্ত চলাচলে সহায়তা করে। পাশাপাশি রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করে। একই সঙ্গে রক্তের কোলেস্টরেল(Cholesterol) কমাতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

হরমোন নিঃসরণ: রসুনে থাকা সালফার আমাদের শরীরের নানা হরমোন নিঃসরণ করতে সহায়তা করে।

হৃদরোগজনিত সমস্যা: হৃদজনিত বিভিন্ন সমস্যায় ভীষণ কার্যকর এ ভেষজ। ডাক্তারি পরীক্ষায় প্রমাণিত, এটি উচ্চ রক্তচাপও কমিয়ে দেয়।

রোগজীবাণু ধ্বংস: রসুনে থাকা ‘অ্যালিসিন’ পদার্থ ক্ষত সারাতে ভূমিকা রাখে। তাছাড়া পদার্থটি যক্ষা, আমাশয়, টাইফয়েড(Typhoid) প্রভৃতির রোগজীবাণু ধ্বংস করে।

ঠাণ্ডা কমায়: ঠাণ্ডা লাগা, গলা বসে যাওয়া কিংবা গলাব্যথা, মাথাব্যথা(Headache), গেঁটে বাত, হাঁপানি, ব্রংকাইটিসের সমস্যায় রসুন চিবিয়ে খেলে এ ধরনের সমস্যাগুলো একেবারেই থাকে না।

ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে: ডায়াবেটিকদের জন্য উপকারী মসলা এই রসুন(Garlic)। এটি ব্লাড সুগার কমিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে।

হজমের সমস্যা দূর করে: লিভারের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় এবং হজমের সমস্যা দূর করে এ ঔষধি। অ্যালার্জি সারিয়ে তুলতে এর ভূমিকা সুবিদিত।

ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে আনে: অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন ফুড পয়জনিং নিবারণ করে এ মসলা। এটা সংক্ষপে আলোচনা হলো, আরো বিস্তারিত নিচে দেয়া হলো:

ওয়ান্ডার ড্রাগ: রসুনকে আদর করে কিন্তু এই নামেই ডেকে থাকা হয়। প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ রসুনকে নানা কাজে ব্যবহার করেছে। সেই কাজের মধ্যে অবশ্য চিকিত্‍সা সংক্রান্ত ব্যবহারই বেশী হতো। রসুনে প্রচুর পরিমাণে সালফার যৌগ থাকে থাকে যাকে অ্যালিসিন বলা হয়। এই অ্যালিসিন কিন্তু কাঁচা রসুনেই পাওয়া যায়। অ্যালিসিনের নানা গুণ আছে। জানেন কি, প্রতি ১০০ গ্রাম রসুনে প্রায় ১৫০ ক্যালোরি ও ৩৩ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৬.৩৬ গ্রাম প্রোটিন থাকে। এছাড়া রসুনে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন(Vitamin) বি ১, বি ২, বি ৩ ও বি ৬, ফোলেট, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সোডিয়াম আর জিঙ্ক থাকে। রোজ সকালে উঠে খালি পেটে এক বা দু’কোয়া রসুন(Garlic) আপনি চোখ বন্ধ করে গন্ধ সহ্য করে খেয়ে ফেলার অভ্যেস যদি করতে পারেন, তাহলে দেখবেন কত্ত উপকারই না পাচ্ছেন!

রক্তকে পরিশুদ্ধ করতে: আপনি কি প্রায়ই ব্রণের সমস্যায় ভোগেন? নানারকম ওষুধ লাগিয়ে বা নামীদামী ডাক্তারকে দেখিয়েও কোনো ফল পাননি তো? এবার রসুন ব্যবহার করে দেখুন। কাঁচা রসুন আপনার রক্তকে পরিশুদ্ধ করে, তার ফলে আপনার ত্বক(Skin) ভেতর থেকে পরিষ্কার হয়। সকালে উঠে খালি পেটে দু’কোয়া রসুন খান আর প্রচুর পরিমাণে জল খান দেখবেন ব্রণর সমস্যার সমাধান খানিক হয়েছে।

সর্দিকাশিতে: জানেন কি, রসুন(Garlic) সর্দিকাশির অব্যর্থ ওষুধ হিসেবে কাজ করে? কারণ রসুনে থাকা প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট সর্দিকাশির জীবাণুর বিরুদ্ধে শরীরের অনাক্রম্যতাকে বাড়ায়। ফলে সর্দিকাশির সম্ভাবনা কমে। সকালে উঠে ২-৩ কোয়া রসুন খান, বা রসুন থেঁতো করে চা বানিয়ে খান, দেখবেন বন্ধ নাকের সমস্যা থেকে মুক্তি পেয়ে গেছেন। তাছাড়া নিয়ম করে রসুন খেয়ে গেলে সর্দিকাশি আর আপনার ধারেকাছেও ঘেঁষতে পারবে না।

কোলেস্টেরল কমাতে: রোজ খালি পেটে রসুন খেলে তা আপনার শরীরে কোলেস্টেরল(Cholesterol) কমাতে সাহায্য করবে। বিভিন্ন সমীক্ষায় জানা গেছে, রোজ সকালে খালি পেটে রসুন খেলে কোলেস্টেরলের মাত্রা ৯-১২ শতাংশ কমে। এল.ডি.এল., ট্রাই-গ্লিসারাইডের মাত্রাও রসুন(Garlic) খেলে কমে। তাছাড়া রসুনে থাকা অ্যালিসিনের অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট গুণ থাকায় তা রক্তচাপ ও ব্লাড সুগারের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে রাখে।

রসুন অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল: প্রাচীনকালে রসুন অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ওষুধ(Medicine) হিসেবে ব্যবহার করা হতো। রসুনে থাকা অ্যালিসিন প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে, তাই রসুনকে প্রাকৃতিক অ্যান্টি-বায়োটিক বলা হয়। বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়াল, প্যারাসাইটিক ইনফেকশন সারানোর জন্য রসুন(Garlic) ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

মুখের ব্যাকটেরিয়া তাড়াতে: রসুনের মাউথওয়াশ-শুনতে আজব লাগছে নিশ্চয়ই। কিন্তু এই রসুনের মাউথওয়াশ আপনার দাঁতে ক্যাভিটি সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে। তাই দাঁতের পোকা তাড়াতে আর দাঁতকে সুস্থ রাখতে রসুন(Garlic) খান।

অ্যান্টি-ফাঙ্গাল: রসুনে থাকা অ্যালিসিন বিভিন্ন ক্ষতিকারক ফাঙ্গাসকেও ধ্বংস করে। তাই ত্বকের নানারকম ফাঙ্গাল ইনফেকশন কমাতে রসুন ব্যবহার করা হয়। রোজ সকালে এক কোয়া করে রসুন কাঁচা চিবিয়ে খেলে রিংওয়ার্ম, অ্যাথলিট’স ফুট ইত্যাদি ফাঙ্গাল ইনফেকশনের হাত থেকেও আপনি মুক্তি পেতে পারেন।

কৃমি দূর করতে: বিভিন্ন রিসার্চ থেকে জানা গেছে রসুন বাচ্ছাদের কৃমি দূর করতে সাহায্য করে। কৃমির সমস্যা ছোটবেলায় কম-বেশি সব বাচ্চারই থাকে। ওষুধ খাওয়ানোর বদলে এবার আপনার বাচ্ছাকে কাঁচা রসুন(Garlic) খাওয়ান। দেখবেন কৃমি বাপ বাপ করে পালিয়েছে।

ক্যান্সার দূর করতে: সাম্প্রতিক কালের নানা স্টাডি থেকে জানা গেছে, নিয়ম করে কাঁচা রসুন খেলে স্টমাক আর কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের সম্ভাবনা কমে। এছাড়া রসুনে থাকা অ্যালাইল সালফাইড কোলন ক্যান্সার, প্রস্টেটের ক্যান্সার, স্তন ও ফুসফুসের ক্যান্সারের সম্ভাবনাকেও কমায়। আর কাঁচা রসুন(Garlic) ক্যান্সারের বিরুদ্ধে আমাদের শরীরের অনাক্রম্যতাকেও বাড়ায়।

ত্বকের যত্ন নিতে: ফ্রি-র‍্যাডিক্যালের ক্ষতিকর প্রভাব ও কোলাজেনের ভাঙন থেকে রসুন(Garlic) আমাদের ত্বককে রক্ষা করে। কোলাজেনের ভাঙনের ফলে আমাদের ত্বক বয়স্ক দেখায়। রসুন আমাদের ত্বকের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক অ্যান্টি-এজিং-এর কাজ করে ও ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা রক্ষা করে। ত্বকের বিভিন্ন ফাঙ্গাল ইনফেকশনের হাত থেকেও রসুন আমাদের বাঁচায়। ব্রণ শুকোতেও রসুন সাহায্য করে। তাছাড়া ত্বকের সারফেসে থাকা ব্যাকটেরিয়াকেও রসুন(Garlic) ধ্বংস করে ও ব্রণর সম্ভাবনা কমায়।

শ্বাসকষ্ট কমাতে: আপনার যদি শ্বাসকষ্ট থাকে, তাহলে রসুন আপনার জন্য একদম যথার্থ ওষুধ হতে পারে। শ্বাসকষ্টের ধাত কমানোর জন্য রোজ সকালে উঠে রসুন খান। উপকার পাবেন। তাছাড়া নিউমোনিয়া, ফুসফুসের সমস্যা, ব্রঙ্কাইটিস ইত্যাদি গুরুতর রোগের চিকিত্‍সাতেও রসুন(Garlic) ব্যবহার হয়।

যক্ষ্মার চিকিত্‍সায়: রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে আপনি যদি আস্ত একটা গোটা রসুন(Garlic) খেয়ে ফেলতে পারেন, তাহলে যক্ষ্মার উপসর্গের হাত থেকে আপনার মুক্তি মিলবে। যক্ষ্মার সম্ভাবনাও অনেক হ্রাস পাবে।

পেটকে ঠিক রাখতে: আগেই বলেছি রসুন অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল হিসেবে কাজ করে। রোজ সকালে উঠে খালি পেটে যদি রসুন খান, তাহলে তা আপনার পেটে থাকা ব্যাকটেরিয়া(Bacteria), টক্সিনকে দূর করে পেটকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। আর আপনার যদি ডায়রিয়ার ট্যান্ডেন্সি থাকে তাহলেও রসুন(Garlic) খান নিয়মিত।

হার্ট ঠিক রাখতে: জানেন কি, হার্টের চিকিত্‍সায় রসুনকে সুপারফুড বলা হয়। রসুন হাইপার-টেনশন কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া রসুন রক্তের ঘনত্বকে কমায় ও রক্ত সঞ্চালনকে স্বাভাবিক রাখে। ফলে হার্টও সুস্থ থাকে। ধমনীর প্রাচীর শক্ত হয়ে গেলেও হার্টের নানা রোগ দেখা যেতে পারে। রসুনে থাকা সালফারের যৌগ ধমনীর প্রাচীরকে সুস্থ রাখে। ফলে শরীরে রক্ত সঞ্চালন ভালো হয়। আর জমাট বাধা রক্ত পাতলা করতেও রসুন(Garlic) ব্যবহার করা হয়। যার ফলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোকের সম্ভাবনা কমে। তাই সুস্থ থাকতে রোজ সকালে উঠে এক কোয়া রসুন থেঁতো করে খান। দেখবেন আপনার হার্টও সুস্থ থাকবে, আপনিও সুস্থ থাকবেন।

খিদে ও হজমশক্তি বাড়াতে: রোজ সকালে উঠে যদি এক কোয়া করে রসুন খান, তাহলে দেখবেন আপনার হজমশক্তি কেমন বেড়ে গেছে! পেট খারাপের সম্ভাবনাও কমে। তাছাড়া ওই এক কোয়া রসুন রোজ নিয়ম করে খেলে আপনার খিদেও বেড়ে যাবে।

নার্ভের সমস্যায়: নার্ভের নানারকম সমস্যায় অনেকসময় খালি পেটে রসুন(Garlic) খেলে কাজ দেয়। প্রাচীনকালে আয়ুর্বেদিক চিকিত্‍সায় নার্ভের অসুখের ক্ষেত্রে চিকিত্‍সকেরা খালি পেটে রসুন খাবার পরামর্শ দিতেন।

স্ট্রেস কমাতে: আপনি কি জানেন যে রসুনে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট থাকে যা আমাদের শরীরের ফ্রি-র‍্যাডিক্যালকে ধ্বংস করে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়। ফ্রি-র‍্যাডিক্যাল কোষের প্রাচীর ও ডি.এন.এ.-কে ক্ষতিগ্রস্ত করে। আর অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের মাত্রা বেড়ে গেলে তা শরীরে নানারকম রোগ ডেকে আনে।

অনাক্রম্যতা বাড়াতে: রসুনে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন(Vitamin) সি, ভিটামিন বি ৬, সেলেনিয়াম আর ম্যাঙ্গানিজ থাকে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়ায়। আর রসুনের অ্যান্টি-ভাইরাল গুণ থাকায় তা ভাইরাস বাহিত বিভিন্ন রোগের হাত থেকে আমাদের বাঁচায় ও শরীরে এইসব ক্ষতিকারক ভাইরাসের বিরুদ্ধে একধরণের অনাক্রম্যতা তৈরি করে। জানেন কি, যে রাশিয়াতে রসুনকে সেখানকার লোকে ‘রাশিয়ান পেনিসিলিন’ বলে? রোজ খালি পেটে রসুন(Garlic) খাওয়া শরীরের অনাক্রম্যতা বাড়ায়, ফলে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। তাছাড়া পরিবেশের নানা ক্ষতিকারক জীবাণু, ব্যাকটেরিয়ার হাত থেকেও রসুন আমাদের রক্ষা করে।

অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস কমাতে: রক্তের জমাট বাঁধা ও প্লাক আমাদের শরীরে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসের সম্ভাবনা তৈরি করে। রসুন রক্তের জমাট বাঁধার সম্ভাবনাকে কমায় ও প্লাককে ধ্বংস করে, ফলে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসের সম্ভাবনাও কমে। তাই রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে নিয়ম করে কাঁচা রসুন খান।

লিভারের কর্মক্ষমতা বাড়াতে: কাঁচা রসুন(Garlic) আমাদের লিভারের কর্মক্ষমতা বাড়াতে ও লিভারকে ঠিক রাখতে সাহায্য করে।

রসুন সোরিওসিস কমাতে: রসুনের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ সোরিওসিস কমায় ও ত্বকের নানা সমস্যার সমাধান করে।

অস্টিও-আরথ্রাইটিস কমাতে: বিভিন্ন স্টাডি থেকে জানা গেছে, যে সব মানুষ রোজ সকালে উঠে নিয়ম করে এক বা দু’কোয়া কাঁচা রসুন(Garlic) খান, তাদের অস্টিও-আরথ্রাইটিসের সম্ভাবনা বহুগুণ হ্রাস পায়। কারণ রসুনের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট বৈশিষ্ট্য ডায়ালিল ডাই-সালফাইড নামক যৌগ থাকে, যা শরীরের কার্টিলেজকে ক্ষতিগ্রস্তকারী উৎসেচকের পরিমাণ কমায়। হাত-পায়ের হাড়ের সংযোগস্থলের ব্যথা ও প্রদাহ কমায় ফলে রিউম্যাটয়েড আরথ্রাইটিসের রোগীরা উপকার পান।

অ্যালজাইমার কমাতে: অ্যালজাইমার ও ডিমেনশিয়া(Dementia) রোগের সম্ভাবনা কমাতেও কাঁচা রসুন(Garlic) ব্যবহার করা হয়। যারা সকালে উঠে কাঁচা রসুন নিয়ম করে খান, তাদের এই দুটি মারাত্মক রোগের সম্ভাবনা কিছুটা হলেও কমে যায়।

তাহলে দেখে নিলেন তো সামান্য এক কি দুই কোয়া রসুনের কত দম? পুরো পাওয়ার হাউস যাকে বলে! বেকার গুচ্ছ ওষুধ(Medicine) একগাদা দাম দিয়ে কিনে তো অনেক খেলেন, তার থেকে এবার ওসব বাদ দিয়ে রসুন ট্রাই করেই দেখুন না! তাহলে চেষ্টা করে দেখুন একবার, আপনার আর রসুনের কেমিস্ট্রি জমে যাবে একেবারে। খালি পেটে রসুন(Garlic) অবশ্যই খেতে হবে সকালে, ব্রেকফাস্ট করার আগে। চিবিয়ে খেতে না চাইলে পানি দিয়ে গিলে ফেলুন দু’কোয়া রসুন। তবে হ্যাঁ, অবশ্যই টুকরো করে নেবেন।

Check Also

পুদিনা পাতা

ইফতারে পুদিনা পাতা খেলে পাবেন ৮টি উপকারিতা

রমজান মাসে সারাদিন রোজা রেখে ইফতারিতে পুষ্টিকর (Nutritious) খাবার খুবই জরুরি। তাই ইফতারির মেন্যুতে রাখতে ...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *