Home / স্বাস্থ্য টিপস / বিভিন্ন যোগ ব্যায়াম ও তাদের উপকারিতা জেনে নিন

বিভিন্ন যোগ ব্যায়াম ও তাদের উপকারিতা জেনে নিন

আশা করি সবাই ভাল আছেন। আজ আপনাদের মাঝে অরেকটি আর্টিকেল নিয়ে হাজির হলাম। আজ আপনাদের জানাবো বিভিন্ন যোগ ব্যায়াম(Yoga exercises) ও তাদের উপকারিতা সম্পর্কে। যোগ শব্দটি ভারতীয় সভ্যতায় বহু প্রাচীন । ব্যায়াম(Exercise) কথার অর্থ নিয়মিত অঙ্গ চালনা । একটি বিশেষ ভঙ্গিতে মনঃ সংযোগ করে কিছু সময়ের জন্য স্থির ভাবে অবস্থান করাকে বলে আসন বা যোগাসন(Yoga) । শরীর সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখতে নিয়মিত যোগ ব্যায়াম(Yoga exercises)আভ্যাস করার প্রয়োজন ।যোগ ব্যায়াম

বিভিন্ন যোগ ব্যায়াম ও তাদের উপকারিতা জেনে নিন

প্রাচীনকালে আশ্রমিক বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের বেদ আভ্যাসের সাথে সাথে শরীর(Body) গঠনের জন্য যোগাসন অনুশীলন করতে হত । যোগাসন(Yoga) অনুশীলন করলে দেহ সুগঠিত হয়, শরীর ও মনের বিকাশের জন্য সহায়তা করে । নীচে আপনি অভ্যাস করতে পারেন এমন কয়েকটি যোগাসনের প্রনালি ও উপকারিতা দেওয়া হল । সব গুলোর প্রনালি ও উপকারিতা জানতে লেখাটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

১) পদ্মাসন – পদ্মাসন(Padmasana) আভ্যাসের সময় পা দুটি এমন ভাবে একটির উপর অপরটি থাকে, যাতে পায়ের অবস্থান পদ্মের পাপড়ির মত দেখায় । বাম উরুর উপর ডান পা, ডান উরুর উপর বান পা রাখতে হবে । এই অবস্থায় দু হাঁটু মাটিতে ঠেকে থাকবে । মেরুদণ্ড(Spine) সোজা রেখে বাম হা ত ডান উরুর উপর, ডান হাত বাম উরুর উপর রাখতে হবে । শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে হবে ।

উপকারিতা – ধ্যান ধারনা অভ্যাসের জন্য এই আসন গুরুত্বপূর্ণ । এই আসনে পায়ের বাত দূর হয় । মেরুদণ্ড(Spine) সরল ও নমনীয় হয় । পায়ের পেশি সবল হয় । মানসিক একাগ্রতা ও ধৈর্য(Patience) বৃদ্ধি পায় । পড়াশুনায় মনোযোগ বৃদ্ধি পায় ।

২) ভুজাঙ্গসন – এই আসন করার সময় কোমর থেকে দেহের উপরের অংশকে উপরে তুলতে হয় । এই আসন করার সময় শরীর ভুজঙ্গ বা সাপের ফনা তুললে যেমন হয় সেভাবে দেখায় । পা(Feet) দুটি জোড়া ও সোজা রাখা অবস্থায় চিবুক মাটিতে রেখে উপুড় হয়ে শুতে হবে । দু হাতের তালু বুকের দুপাশে এমন ভাবে রাখতে হবে যেন আঙুল(Finger) কাঁধের সমান ও কনুই কোমরের সঙ্গে লেগে থাকে । এবার হাতে ভর না দিয়ে কোমরের জোরে বুক ও নাভির উপর অংশ উপরে তোলার চেষ্টা করুন । এই অবস্থান ৪০-৬০ সেকেন্ড পর্যন্ত করবেন । শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে হবে ।

উপকারিতা – এই আসনের দ্বারা কোমর, বুক, পীঠ, শিরদাঁড়া, পাকস্থলীর(Stomach) কাজ ভাল হয় । মেরুদণ্ডের বক্রতা দূর হয় । মেরুদণ্ডের সামনের অংশে স্নায়ুতন্ত্র গুলি সলরতর হয় ।

৩) শবাসন – এই আসন অভ্যাসের সময় শব বা মড়ার মত নিঃশব্দে শুয়ে থাকে, তাই একে শবাসন বলে । পা দুটি সোজা সরল রেখে দেহ শিথিল করে চিত হয়ে শুয়ে পড়তে হবে । পা(Feet) দুটো যেন লম্বা লম্বি ভাবে শরীরের দুপাশে থাকে। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে হবে । এমন ভাবে শুয়ে থাকতে হবে যেন আপনার মনে কোন চিন্তা ভাবনা নেই । অন্যান্য আসন করার শেষে শবাসন করা যায় । উপুড় হয়ে শবাসন করা ঠিক না ।

উপকারিতা – শবাসন করার ফলে শরীরের সমস্ত ক্লান্তি(Fatigue) দূর হয়ে যায় । শরীরে নতুন কর্ম শক্তি আসে । মানসিক উত্তেজনা, চঞ্চলতা, অনিদ্রা, অবসাদ(Exhaustion) প্রভৃতি এই আসনের দ্বারা দূর হয় ।

৪) বজ্রাসন – পা দুটি পিছনের দিকে মুড়ে গোড়ালি দুটো কিছুটা ফাঁক রেখে তার উপর বসতে হবে । মেরুদণ্ড(Spine) সোজা রেখে হাত দুটি দুই উরুর উপর সোজা ভাবে রাখতে হবে । শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে হবে । প্রথম দিকে কিছুটা অসুবিধা হলেও অভ্যাস করতে পারলে পরে আর কোনো অসুবিধা হবে না ।

উপকারিতা – অম্বল, বদহজম(Indigestion), কোষ্টকাঠিন্য ইত্যাদি পেটের রোগ ভাল হয় । নিয়মিত আভ্যাস করলে সায়টিকা বাত, পায়ের বাত ইত্যাদি হয় না । পায়ের পেশি ও স্নায়ু সবল হয় ।

৫) ধনুরাসন – ধনুরাসন করার সময় অনেকটা ধনুকের মতো দেখতে লাগে । শরীর শিথিল করে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন ।পা দুটি হাঁটুর কাছ থেকে নিয়ে পিঠের দিকে এনে দু হাত দিয়ে গোড়ালি(Ankle) শক্ত করে ধরুন । পা ও হাঁটু জোড়া রাখার চেষ্টা করুন । এখন হাত দিয়ে গোড়ালি টেনে ধীরে ধীরে মাথা(Head), বুক ও পা মাটি থেকে তুলুন । ঘাড় যতটা পারেন পিছনের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন । শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে হবে ।

উপকারিতা – এই আসন অভ্যাসের ফলে লিভারের সমস্যা, কোষ্টকাঠিন্য, পেটে ও কোমরে চর্বি(Fat) জমা হওয়া থেকে মুক্তি দেয় । মেরুদণ্ড(Spine) নমনীয়, কুঁজো ভাব দূর হয় । বুকের বেষ্টনী বাড়াতে সাহায্য করে ।

৬) সূর্য নমস্কার – প্রাচীন কালে মুনি ঋষিরা যোগ ব্যায়াম(Yoga exercises) অভ্যাস করার আগে শরীরকে যোগ ব্যায়াম(Exercise) অভ্যাসের উপযোগী করে তোলার জন্য এই আসনটি করতেন । ভঙ্গি গুলি একটা ছন্দময়য় গতিতে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত করতে হয় ।

উপকারিতা – অল্প সময়য়ের মধ্যে দেহের জড়তা কেটে যায় । দেহ যেকোনো কাজের উপযোগী হয়ে ওঠে । বুকের, কোমরের, পীঠের, হাতের, কাঁধের ও পায়ের পেশি সুগঠিত হয় । শরীরে রক্ত(Blood) চলাচল বৃদ্ধি পায়, শ্বাসযন্ত্র সবল হয় ।

৭) সহজ প্রানায়ন – আমাদের শ্বাসকার্যে প্রধান ভূমিকা নেয় ফুসফুস (Lung)। ফুসফুসের ক্ষমতার অর্ধেকের কম অংশ ব্যবহার হয় । সহজ প্রানায়নের উদ্দেশ্য হল যে ফুসফুসের সম্পূর্ণ অংশকে ব্যবহার করে দেহে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়ানো । যে কোন আসনে বসে মেরুদণ্ড(Spine) সোজা রেখে গভীর ভাবে শ্বাস নিতে হবে । যখন আর শ্বাস নেওয়া যাচ্ছেনা তখন আস্তে আস্তে নিঃশ্বাস ছাড়তে হবে । যতটা সময় নিয়ে শ্বাস নেবেন তার থেকে বেশি সময় নিয়ে শ্বাস ছাড়তে হবে ।

উপকারিতা – ফুসফুসের জন্য খুব উপকারী । মানসিক(Emotional) একাগ্রতা ও স্মৃতিশক্তি বাড়ে । দেহে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়ে । সর্দি, কাশি হাঁপানি ভালো হয় । দেহের বাইরে দূষিত পদার্থ বেরিয়ে যায় ।

আমাদের লেখা আপনার কেমন লাগছে ও আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে তবে নিচে কমেন্ট করে জানান। আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্টটি পৌঁছে দিতে দয়া করে শেয়ার করুন। পুরো পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

Check Also

হিটস্ট্রোক

তীব্র তাপপ্রবাহে হিটস্ট্রোক এড়াবেন যেভাবে

গ্রীষ্মের দাবদাহে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হন অনেকেই। হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি এড়াতে কিছু টিপস মেনে চলতে হবে। ...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *