কতবার মুখ(Face) পরিষ্কার করতে হবে তা নির্ভর করে পরিবেশ ও ত্বকের ধরনের ওপর। চর্ম-বিশেষজ্ঞরা ত্বক(Skin) পরিষ্কারের উপযোগী ‘ক্লিঞ্জার’ ব্যবহার করার পরামর্শ দেয়। কোনো রকম ধুলাবালির মধ্যে না গেলেও দিনে দুবার মুখ ধোয়ার কথা যেমন বলা হয় তেমনি বেশি মুখ ধোয়া আবার ত্বকের জন্যও ক্ষতিরও কারণ হতে পারে। মুখের ত্বক(Skin) পরিষ্কারের ক্ষেত্রে এরকম অনেক ধারণাই রয়েছে যা ভুল।
মুখ ধোয়া নিয়ে যত ভ্রান্ত ধারণা
ভ্রান্ত ধারণা: গোসলের সময় মুখ ধোবেন না
গোসলের সময় মুখ(Face) ধোয়া কার্যকর। যদিও অনেকে মনে করেন যে, এটা গোসলের রুটিনের আয়তা ভুক্ত নয়। তবে এর নিয়মিত চর্চা ত্বকের যত্নে ভালো ধাপ বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রে ‘বিআলাইফ’য়ের প্রতিষ্ঠাতা ও ত্বক-বিশেষজ্ঞ শাসা হু।
এর ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “গোসলের সময় পানির গরম ভাপ লোমকূপ উন্মুক্ত করে ও গভীর থেকে এক্সফলিয়েট করে থাকে।” “এছাড়াও শক্তিশালী সাবান(Soap) বা গরম পানি ব্যবহার না করলেও গোসলের সময় মুখ ধোয়া, সময় ও পানি ব্যবহারের পরিমাণ বাঁচায় এবং রূপচর্চার জন্য গভীর থেকে ত্বককে প্রস্তুত করে।”
ভ্রান্ত ধারণা: সবসময় দিনে দুইবার মুখ ধুতে হবে
সব ধরনের ত্বকের জন্য এটা উপযুক্ত নয়। নিউ ইয়র্ক’য়ের ত্বক বিশেষজ্ঞ হ্যাডলি কিং ‘ইনসাইডার ডটকম’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “দিনে কতবার মুখ ধুতে হবে তা নির্ভর করবে ত্বকের ধরনের ওপর।” শুষ্ক বা সংবেদনশীল ত্বক(Skin) দিনে একবার বিকালে ধোয়া যথেষ্ট। তবে তৈলাক্ত ত্বক দিনে অবশ্যই দুবার ধুতে হবে।
ঘাম, শরীরচর্চা, ভারী মেকআপ(Makeup) ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকলে জিম থেকে ফিরে এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অবশ্যই ত্বক ভালো মতো পরিষ্কার করতে হবে বলে জানান তিনি। কিং বলেন, “রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মুখ পরিষ্কার করা ত্বক(Skin) থেকে সারাদিনের ময়লা, দূষণ দূর করতে সহায়ক।” অন্যথায়, তা ত্বকের ক্ষতি করে ও কোলাজেন নষ্ট করে দিতে পারে।
তিনি আরও বলেন, “ত্বক ভালো রাখতে রাতে প্রসাধনী(Cosmetics) ব্যবহার করা হলে, সকালে অবশ্যই ভালো মতো ত্বক পরিষ্কার করতে হবে।”
ভ্রান্ত ধারণা: মুখ ধোয়ার প্রসাধনী ব্যবহারের পরে তা যদি ত্বকে হালকা জ্বলুনি বা টানটান অনুভব করায়, তবেই তা কার্যকর।
‘কষ্ট না করলে কেষ্ট মেলে না’- কথাটা সবসময় প্রযোজ্য নয়। ত্বক বিশেষজ্ঞ এবং যুকরাষ্ট্রের ‘স্কিন কেয়ার’ পণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘ডার্মাডক্টর’য়ের প্রতিষ্ঠাতা অড্রি কুনিন বলেন, “কোনো প্রসাধনী(Cosmetics) ব্যবহারের পরে ত্বকের জ্বালাপোড়া অনুভূত হলে বুঝতে হবে এর উপাদানগুলো আপনার জন্য উপযুক্ত নয়। এটা ত্বকের সুরক্ষার স্তরকে আঘাত করছে এবং ফলে ত্বক(Skin) আরও বেশি সংবেদনশীল হতে পারে এবং সংক্রমণ দেখা দিতে পারে।”
হু’য়ের মতে, “কয়েকটা অ্যাসিড(Acid) যেমন- রেটিনয়েড ত্বকের সহ্য হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত কিছুটা জ্বালাপোড়া বা চামড়া ওঠার প্রবণতা দেখা দিতে পারে।” তিনি বলেন, “ত্বকের যত্নে সক্রিয় উপাদান ব্যবহার করলে এই ধরনের লক্ষণ দেখা দিতে পারে এবং পরে তা আবার ঠিকও হয়ে যায়।” প্রসাধনীর কোনো উপাদান নিয়ে সংশয় থাকলে তা ব্যবহারের আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।
ভ্রান্ত ধারণা: কেবল সাবার ও পানি দিয়ে মুখ ধোয়া যথেষ্ট
নিউ ইয়র্ক’য়ের ত্বক বিশেষজ্ঞ র্যাচেল নাজারিয়ান ‘ইনসাইডার ডটকম’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “সাধারণ সাবান তৈরি করা করা হয় সাধারণ জিনিস পরিষ্কারের জন্য, আপনার ত্বক(Skin) তো সাধারণ নয়।”
তিনি আরও বলেন, “এই ধরনের সাবান ত্বকের প্রাকৃতিক তেল শুষে নেয় এবং ‘পিএইচ’য়ের ভারসাম্য নষ্ট করে ত্বকের ক্ষতি(Skin damage) করে। ফলে ত্বক শুষ্ক ও সংবেদনশীল হয়ে যায়।” মুখ ধুতে মৃদু, সুগন্ধি মুক্ত পরিষ্কারক ব্যবহার করা উচিত।
ভ্রান্ত ধারণা: ত্বক ভালো মতো পরিষ্কার করতে স্ক্রাবিং ব্রাশ ব্যবহার করা উচিত
হু বলেন, “ব্রাশের সাহায্যে ত্বক পরিষ্কার বাড়তি তেল বা মেইকআপ(Makeup) দূর করতে পারেনা।” “এতে করে ধীরে ধীরে ত্বকের তেল নিঃসরণ বেড়ে যায় এবং লোমকূপ আবদ্ধ হয়ে যায়।” যান্ত্রিক স্ক্রাবার ব্যবহারে ত্বকে ক্ষুদ্র ফাটলের সৃষ্টি করে যা অ্যালার্জি বা জ্বলুনির কারণ হতে পারে। তাই স্ক্রাব(Scrub) করতে তিনি মিহি কাপড় ও মৃদু এক্সফলিয়েট করে এমন ক্লিঞ্জার ব্যবহারের পরামর্শ দেন।
ভ্রান্ত ধারণা: ব্রণ মানেই নিয়মিত মুখ ঠিকমতো পরিষ্কার করা হয় না
“ত্বক ভালো রাখতে অবশ্যই তা পরিষ্কার করতে হবে। তবে ত্বক(Skin) পরিষ্কার রাখা মানেই এই নয় যে, ব্রণ হবে না। বংশগতি, হরমোন ইত্যাদি নানান কারণে ব্রণ(Acne) হতে পারে।” বলেন কিং।
“ত্বক তৈলাক্ত হলে ব্রণের প্রবণতা বাড়ে। কারণ লোমকূপ আবদ্ধ হয়ে যায় ও ব্রেকআউট দেখা দেয়। এক্ষেত্রে, নিয়মিত মুখ পরিষ্কার না করা ব্রণের জন্য দায়ী” কিন্তু, ত্বক তৈলাক্ত না হলে ব্রণ(Acne) হওয়ার পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে, তা খুঁজে বের করতে হবে।
ভ্রান্ত ধারণা: মুখ মুছতে পরিষ্কার কাপড় ব্যবহার না করা
পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুখ মোছার ক্ষেত্রে দুটো সমস্যা দেখা দিতে পারে। প্রথমত, কাপড়ে যদি ব্যাক্টেরিয়া(Bacteria), ফাঙ্গাস বা ইস্ট থাকে এবং দ্বিতীয়ত কাপড়টি ত্বকে ঘর্ষণ সৃষ্টি করে জ্বলুনি বাড়াতে পারে।
তবে কিং বলেন, “পরিষ্কার পাতলা কাপড় ব্যবহার করে কেবল আলতো চাপ দিয়ে মুখ নুছে নেওয়াই সবচেয়ে ভালো।”
ভ্রান্ত ধারণা: মুখ ধোয়ার আগে আলাদাভাবে মেইকআপ তোলার প্রয়োজন নেই
অনেকেই মনে করেন আলাদাভাবে মেইকআপ(Makeup) তোলার প্রয়োজন নেই, কেবল ধুয়ে ফেলেই হবে। কিং’য়ের মতে, “প্রথমে অবশ্যই ভালো মতো মেইকআপ তুলতে হবে এবং তার পরে ত্বক(Skin) পরিচর্যার রুটিন ব্যবহার করতে হবে।”
মেইকআপ ঠিক মতো পরিষ্কার করা না হলে এতে থাকা পিগ্মেন্ট, সংরক্ষক, খনিজ উপাদান ইত্যাদি ত্বকের লোমকূপ আবদ্ধ করে ফেলে এবং ত্বকে রূপচর্চার প্রসাধনী কাজ করতে বাধা দেয়। তাই প্রথমেই মেইকআপ ভালো মতো পরিষ্কার করে ত্বক(Skin) পরিচর্যার পরামর্শ দেন, তিনি।
ভ্রান্ত ধারণা: মেইকআপ তুলতে কেবল মেইকআপ ওয়াইপ্স যথেষ্ট।
“ক্লিঞ্জিং ওয়াইপ্স’ ত্বকের ব্যাক্টেরিয়া, ময়লা ও তেল দূর করতে পারে। তবে লোমকূপের ভেতরে প্রবেশ করা উপাদান দূর করতে পারেনা” বলেন, নাজারিয়ান। এর ফলে ত্বকে ব্রণ ও গ্রন্থির সংক্রমণ দেখা দেয়। তাই ত্বক(Skin) ভালো মতো পরিষ্কার করতে অবশ্যই পানি ও ক্লিঞ্জার ব্যবহার করতে হবে।
ভ্রান্ত ধারণা: মুখ ধোয়ার আগে হাত ধোয়ার দরকার নেই
হু’য়ের মতে, “হাত দেখতে ময়লা না লাগলেও মুখের ত্বকে হাত লাগানোর আগে অবশ্যই তা ভালো মতো ধুয়ে নিতে হবে।”
অধিকাংশ মানুষ মোবাইল, কি-বোর্ড বা কম্পিউটার ব্যবহার করে। গাড়ি চালিয়ে হাত না ধুয়েই মুখে হাত দেন। এতে ব্যাক্টেরিয়া ত্বকে সংক্রমিত(Infected) হয়। ফলে নানান রকম ত্বকের সমস্যা দেখা দেয়, বিশেষত যাদের ব্রণ ও ‘একজিমা’র প্রবণতা আছে।
সুস্থ থাকুন, নিজেকে এবং পরিবারকে ভালোবাসুন। আমাদের লেখা আপনার কেমন লাগছে ও আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে তবে নিচে কমেন্ট করে জানান। আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্টটি পৌঁছে দিতে দয়া করে শেয়ার করুন। পুরো পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।