আশা করি সবাই ভাল আছেন। আজ আপনাদের মাঝে অরেকটি আর্টিকেল নিয়ে হাজির হলাম। আজ আপনাদের জানাবো লিভারে চর্বি(Fat) জমলে কী করবেন সে বিষয়ে। লিভার রোগ মানেই যেন আঁৎকে উঠা। অন্য কোন রোগে যেমন-তেমন, লিভারে অসুখ হয়েছে মনে করলেই মনে নানা অজানা আশঙ্কা উঁকি-ঝুঁকি দেয়। আর চারপাশের সবাই হয়ে উঠেন একেকজন লিভার(Liver) বিশেষজ্ঞ। এটা করতে হবে, ওটা করোনা জাতীয় পরামর্শ আসতে থাকে ক্রমাগত।
লিভারে চর্বি জমলে কী করবেন জেনে নিন
বিশেষ করে কি খেতে হবে আর কি খাওয়া যাবে না এই নিয়ে পরামর্শের যেন শেষ থাকে না। প্রতিদিন লিভার(Liver) রোগীদের চিকিৎসা করতে যেয়ে যে জিনিসটা মনে হয় তা হলো এ ধরনের রোগীরা তাদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে খুবই বিভ্রান্তিতে থাকেন।
সম্প্রতি ফ্যাটি লিভার(Fatty liver) নামক রোগ প্রায়ই দেখা যাচ্ছে। লিভার বা যকৃতের কোষসমূহে অতিরিক্ত চর্বি(Fat) জমার কারণেই এই রোগ দেখা দেয়। দেশে সাধারণ হিসেবে শতকরা ১৮ থেকে ২০ ভাগ মানুষ এ রোগে ভুগছেন।
প্রকারভেদ :
১। অ্যালকোহলিক (মদ্যপানজনিত) ফ্যাটি লিভার রোগ
২। নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার রোগ (মদ্যপানজনিত নয় এমন কারণে ফ্যাটি লিভার রোগ)। যেহেতু এই রোগটিই আমাদের দেশে বেশি দেখা যায়, এই প্রবন্ধে নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার(Fatty liver) রোগটি আলোকপাত করা হলো।
চর্বি জমার কারণ:
* শরীরের অতিরিক্ত ওজন(Weight)
* রক্তে চর্বির আধিক্য
* ডায়াবেটিস(Diabetes)
* ইনসুলিন কার্যকরহীনতা
কায়িক পরিশ্রম বা ব্যায়ামবিহীন আরামপ্রদ জীবনযাপন এবং অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস এ রোগের প্রধান কারণ।
অন্যান্য কারণ
* মদ্যপান(Drinking)
* হেপাটাইটিস সি
* উইল্সন ডিজিজ (Wilson’s disease)
* অনেক দিন ধরে উপবাস
* হরমোনজনিত রোগ- হাইপোথাইরয়েডিজম, হাইপোপিটুইটারিজম।
* কিছু ওষুধ(Medicine) যেমন- এমিয়োডেরন, স্টেরয়েড, মেথ্রোট্রেক্সেট, টেমোক্সিফেন, ভেলপ্রোয়েট ইত্যাদি।
রোগটি কীভাবে অগ্রসর হয়?
লিভারে চর্বি (Steatosis) > কোষসমূহে চর্বিজনিত প্রদাহ (Steatoepatitis) > ক্রমবর্ধমান লিভারে ফাইব্রোসিস > লিভার সিরোসিস > লিভার ক্যান্সার।
রোগের লক্ষণ:
* বেশিরভাগ রোগীই লক্ষণহীন থাকেন এবং সাধারণত ঘটনাক্রমে রোগটি নির্ণীত হয়। লিভার(Liver) ফাংশন টেস্টে অস্বাভাবিকতা বা লিভার সাইজ বড় হওয়া বা অন্য রোগের অস্বাভাবিকতা বা লিভার(Liver) সাইজ বড় হওয়া বা অন্য রোগের জন্য পরীক্ষা করার সময় বিশেষত আলট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে রোগটি ধরা পড়ে।
* কারো কারো পেটের ডান উপরি অংশে একটু ভার ভার বা হালকা ব্যথা(Pain) অনুভূত হতে পারে। কেউ বা শারীরিক দুর্বলতার অভিযোগ করে থাকে।
* কখনও কখনও রোগী ফ্যাটি লিভার(Fatty liver) রোগের জটিলতা নিয়ে আসতে পারেন (যেমন লিভার সিরোসিস ও তার জটিলতাগুলো, লিভার ক্যান্সার ইত্যাদি।)
চিকিৎসা
ফ্যাটি লিভার রোগের চিকিৎসার দুটি দিক-
* লিভার রোগের চিকিৎসা
* রোগটির সন্নিহিত অবস্থাগুলো নির্ণয় ও চিকিৎসা, যেমন- শরীরের স্থূলতা, রক্তে চর্বির আধিক্য, ডায়াবেটিস, ইনসুলিন অকার্যকারিতা ক্যার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি ইত্যাদি।
কী করণীয়?
* বর্তমানে ফ্যাটি লিভারের চিকিৎসা প্রধানত জীবনযাপন পদ্ধতি পরিবর্তনের ওপরই জোর দিয়ে থাকে। শরীরের ওজন কমানো, দৈনন্দিন ব্যায়াম এবং কম ক্যালরিযুক্ত আঁশসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ জরুরি।
* শরীরের ওজন(Weight) স্বাভাবিক রাখতে সচেষ্ট হতে হবে। অতিরিক্ত ওজন ঝেড়ে ফেলুন। শরীরের ৫-১০% ওজন কমালে লিভারের চর্বি ও চর্বিজনিত প্রদাহ যথেষ্ট পরিমাপে কমে এবং লিভারের এনজাইমগুলো স্বাভাবিক হয়। মনে রাখতে হবে অতিদ্রুত শরীরের ওজন(Weight) কমানো ঠিক নয়।
* সুষম ও ক্যালারিযুক্ত আঁশসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন। যেমন- সবুজ শাকসবজি(Vegetable), ফলমূল, ইত্যাদি। উচ্চ শর্করা বা চর্বিসমৃদ্ধ খাবার যেমন- ঘি, মাখন, পনির, লাল মাংস(Red meat), মাছের ডিম, বড় মাছের মাথা বর্জনীয়। এতে শরীরের পরিপাক সঠিক হয় এবং ওজন ঠিক রাখতে সহায়তা করে।
* নেশাজাতীয় দ্রব্য বর্জন করতে হবে। মদ্যপান(Drinking) ত্যাগ করুন।
* ফাস্টফুড, কার্বোনেটেড চর্বি বা শর্করা(Sugars) সমৃদ্ধ ড্রিংকস, চকলেট বর্জনীয়।
* দৈনিক শারীরিক পরিশ্রম ও ব্যায়াম(Exercise) শরীরের ওজন ও লিভারের চর্বি কমাতে সাহায্য করে।
* রোজ ঘণ্টাখানেক ঘাম ঝরিয়ে হাঁটতে চেষ্টা করুন।
* ডায়াবেটিস(Diabetes) নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
ফ্যাটি লিভারে চিকিৎসায় কী ওষুধ ব্যবহার করা হয়
বিভিন্ন সময়ে নানাবিধ ওষুধ(Medicine) ব্যবহার করা হয়েছে কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে যে কোনো ওষুধই জীবনযাপন পদ্ধতি পরিবর্তনের চেয়ে অর্থাৎ দৈনন্দিন ব্যায়াম(Exercise), খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ও স্বাভাবিক জীবনযাপনের চেয়ে বেশি কার্যকর নয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিুলিখিত ওষুধ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে ব্যবহার করা হয় যেমন- ভিটামিন-ই, ওমেগো-৩ ফ্যাটি এসিড(Fatty acids) ইত্যাদি। রক্তে চর্বির আধ্যিক্য কমাতে স্টাটিন ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
ফ্যাটি লিভার(Fatty liver) রোগ হলে আতংকিত হওয়ার কিছু নেই। খুব কম সংখ্যক রোগীরই জটিলতা তৈরি হয় এবং তা হতে অনেক বছর সময় লাগে। তাই ভালো থাকার জন্য শরীরের ওজন স্বাভাবিক রাখুন। উচ্চ ক্যালরিযুক্ত(Calorie rich) খাবার বর্জন করুন। দৈনন্দিন ব্যায়ামের অভ্যাস করুন, রোগমুক্তি আসবেই।
আমাদের লেখা আপনার কেমন লাগছে ও আপনার যদি কোনও প্রশ্ন থাকে তবে নিচে কমেন্ট করে জানান । আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্টটি পৌঁছে দিতে দয়া করে শেয়ার করুন । পুরো পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।