ব্যস্ত এই সময়ে কোনো কিছুতে বেশিক্ষণ মনোযোগ (Attention) ধরে রাখা যেন দায়। আর সেটা যদি হয় কাজের মধ্যে, তবে ক্ষতির সম্ভাবনাও থেকে যায়। এক কাজ থেকে অন্য কাজে মনোযোগ চলে যাওয়া বা মনোযোগ ছুটে যাওয়ার মতো বিষয়গুলোর কারণে মানসিক চাপও তৈরি হয়। আর বিষয়টি গবেষণার মাধ্যমে বের করেছে ‘ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া’র ‘ইনফোরম্যাটিকস’য়ের অধ্যাপক ডা. গ্লোরিয়া মার্ক।
মনোযোগ বার বার ছুটে যায় যে কারণে
সিএনএন ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি বলেন, “২০০৪ সালে আমরা পর্যবেক্ষণ করে দেখেছিলাম একজন মানুষ স্ক্রিন (Screen) বা বৈদ্যুতিক যন্ত্রের পর্দার দিকে সাধারণত আড়াই মিনিট খরচ করে। তারপর মনোযোগ ছুটে যায়। কয়েক বছর আগে দেখলাম সেটা কমে হয়েছে ৭৫ সেকেন্ড। আর এখন বেশিরভাগ মানুষই ৪৭ সেকেন্ডের বেশি একটি বিষয়ের দিকে তাকিয়ে দেখে না।”
শুধু একটি স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার বিষয়টা ছাড়াও অন্য কোনো দিকে মনোযোগ (Attention) ছুটে যাওয়ার পর আগের কাজে মনোযোগ পুরোপুরি ফিরে পেতে সময় লাগে ২৫ মিনিট। মার্ক বলেন, “সত্যি বলতে আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, মনোযোগ ফিরতে ২৫ মিনিট ২৬ সেকেন্ড সময় লাগে।”
যে কারণে মনোযোগ ধরে রাখার সময় কমছে
“আমরা যদি পর্দা বা স্ক্রিন সময় বাদ দিয়ে কাজ ধরি, তবে দেখতে পাই মানুষ সাধারণত একটি কাজের মাঝে সাড়ে দশ মিনিট পর পর মনোযোগ হারায়। সেটা হতে পারে অন্য কারও মাধ্যমে বা অন্য কাজে মনোযোগ দিয়ে”- বলেন মার্ক।
এরপর হয়তো ভাববেন, দ্বিতীয় কাজ শেষে হয়ত প্রথম কাজে ফেরত যাবে! তা কিন্তু নয়! বরং তৃতীয় কোনো কাজে মনোযোগ (Attention) চলে যায়। এমনকি তৃতীয় থেকে চতুর্থ কাজের দিকেও ধাবিত হওয়ার প্রবণতা গবেষণায় লক্ষ করেন মার্ক। তিনি বলেন, “তারপর আসল কাজটায় যখন ফেরত আসা হয় তখন দেখা যায় ২৫ মিনিট ধরে অন্য কাজই করা হয়েছে, আসল কাজটাই পড়ে আছে।”
এ পরিস্থিতে মনোযোগ ধরে রাখার পন্থা
এই সমস্যা হওয়ার একমাত্র কারণ ‘মাল্টিটাস্কিং’ বা বহু কাজ একসাথে করা। তবে মার্ক বলেন, “মাল্টিটাস্কিং’ বলে কিছু নেই। যেমন- ইমেইল দেখতে দেখতে আপানি ভিডিও কনফারেন্স (Conference) করতে পারবেন না। তবে যেটা এমনি এমনি হয় সেটা হয়ত করতে পারবেন। যেমন- চুইংগাম চিবাতে চিবাতে হাঁটা বা টাইপ করা।”
তিনি আরও বলেন, “এক কাজ থেকে অন্য কাজে গেলে, একটা থেকে মনোযোগ ছুটবেই। আর মনোযোগের এই অদলবদল করেই আপনি ‘মাল্টিটাক্স’ করছেন। তবে এই অদলবদলের কাজটা দ্রুত করলেই দেখা দেয় মানসিক চাপ।”
ফলে বাড়ে রক্তচাপ (Blood pressure), দ্রুত হয় হৃদগতি। আর মানসিক দিক থেকে এর ফলাফল নেতিবাচক। “যত বেশি মাল্টিটাক্স করা হবে, তত-বেশি ভুল করার মাত্রা বাড়বে”- বলেন মার্ক। “আর্ এটা কে করেছে? আমরাই করেছে- প্রযুক্তির মাধ্যমে। যেমন- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, মোবাইল, টেবলেটস, টেলিভিশিন।”
তবে এক্ষেত্রে মার্ক সবচেয়ে বেশি দোষ দেন ই-মেইল’কে। “আমার মতে ই-মেইল হলো সবচেয়ে খারাপ। কারণ এর সাথে কাজ জড়িত থাকে সাধারণত। আর ই-মেইল আসা মানেই কোনো কাজের চাপ আসা।” তবে এই সময়ে পুরোপুরিভাবে প্রযুক্ত থেকে দূরে থাকা সম্ভব না। সেজন্য এরমধ্যে থেকেও মনোযোগ (Attention) ধরে রাখার চেষ্টা করতে হবে।
যা করা প্রয়োজন
মনোযোগ বেশিক্ষণ ধরে রাখতে প্রযুক্তি পরিমিত ব্যবহারের পরামর্শ দেন, মার্ক। তিনি বলেন, “আবার প্রযুক্তির সাহায্য নিয়েও মনোযো‘গ বাড়ানো যেতে পারে। যেমন- কাজের তালিকা করে দিনের শুরুতে কোনটা আগে করা প্রয়োজন সেটা নির্দিষ্ট করা ফোনে অ্যালার্ম (Alarm) দেওয়া, মনোযোগ ছুটে যায় এমন কোনো বিষয় বা নোটিফিকেশন ব্লক করা, কোনো পরিকল্পনা মাথায় আসলো সেটা তাৎক্ষণিকভাবে মোবাইলে টুকে রাখা ইত্যাদি।”
‘সোশাল মিডিয়া’ বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মনোযো‘গ হারালে- সেই নির্দিষ্ট অ্যাপটা ফোনের ভেতরে কোনো ফোল্ডারের মাঝে রেখে দেওয়ার পরমর্শ দেন- মার্ক, যাতে মোবাইলের ভেতরে ঢুকে সেই অ্যাপগুলো দেখতে সময় লাগে। পাশাপাশি নোটিফিকেশনগুলো বন্ধও করতে হবে।
তবে সবচেয়ে ভালো প্রকৃতির মধ্যে হাঁটতে পারলে। এই অধ্যাপক বলেন, “মনোযোগ ফেরাতে হাঁটা খুবই কার্যকর। আর মাত্র ২০ মিনিট প্রকৃতির মাঝে হাঁটলে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় উত্তেজনা (Excitement) কমে। পাশাপাশি আমরা দেখেছি এর ফলে আরও বেশি কর্মক্ষম হয় মানুষ।”
সুস্থ থাকুন, নিজেকে এবং পরিবারকে ভালোবাসুন। আমাদের লেখা আপনার কাছে কেমন লেগেছে এবং আপনার যদি কোনো প্রশ্ন অথবা মতামত থেকে থাকে তবে নিচে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন। আর আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্টটি পৌঁছে দিতে শেয়ার করুন। সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।