কর্টিসল ‘স্ট্রেস হরমোন’ নামে বেশি পরিচিত। এককথায় মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা, বিষণ্নতা, হতাশা—এগুলোর জন্য এ হরমোনই প্রাথমিকভাবে দায়ী। যদিও এই হরমোন বিপাক প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ, প্রদাহ কমানো ও স্মরণশক্তি গঠনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। জরুরি বা ভয়ের পরিস্থিতিতে রক্তে এই হরমোনের নিঃসরণ ঘটায় অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি। ফলে পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য হৃৎস্পন্দন ও রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। এটা দেহের স্বতঃস্ফূর্ত আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা। এটুকু পড়ে আপনার মনে হতে পারে, কর্টিসল তো তাহলে ভালোই। আসলে বিষয়টি ‘জটিল’। কেননা আমাদের শরীর স্বাভাবিকভাবেই প্রয়োজনীয় কর্টিসল নিঃসরণ করে। তাই মানুষ মূলত অতিরিক্ত কর্টিসলের সমস্যায় ভোগে।
মানসিক চাপ কমাবে যে ১০টি সহজলভ্য খাবার
কর্টিসলের জোয়ার–ভাটা শরীরে প্রাকৃতিকভাবেই ঘটতে থাকে। পর্যাপ্ত ঘুম, শরীরচর্চা, স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের মাধ্যমে ও মানসিকভাবে ভালো থাকার ভেতর দিয়ে এর ভারসাম্য রক্ষা হয়। তবে বিশেষ করে ব্যস্ততম নাগরিক জীবন, অর্থনৈতিক মন্দা, বাজার ব্যবস্থার নানা সংকট, সামাজিক সমস্যায় জর্জরিত হয়ে শরীরে বইতে থাকে কর্টিসলের জোয়ার। রক্ত, প্রস্রাব ও লালা পরীক্ষার মাধ্যমে শরীরে অতিরিক্ত কর্টিসলের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া যায়।
শরীরে কর্টিসল বেশি থাকলে কী হয়
অতিরিক্ত পরিমাণে কর্টিসল মানসিক চাপের সঙ্গে সঙ্গে আরও নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক জটিলতার কারণ। শরীরে অতিরিক্ত কর্টিসল থাকলে অনিদ্রা, হজমের সমস্যা, কাজে উদ্যম না পাওয়া, উৎকণ্ঠা, মেজাজ হারানো, অস্থিরতা, স্মরণশক্তি লোপ পাওয়া, পেশির দুর্বলতা, শীত শীত ভাব এমনকি নারীদের শরীরে অনাকাঙ্ক্ষিত লোম গজানোর মতো সমস্যা হতে পারে।
দীর্ঘ মেয়াদে শরীরে কর্টিসল বেশি থাকলে কী হয়
শরীরে দীর্ঘ মেয়াদে, কয়েক বছর ধরে উচ্চমাত্রায় কর্টিসল থাকলে যৌনাকাঙ্ক্ষা কমে যেতে পারে। বন্ধ হয়ে যেতে পারে পিরিয়ড। মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। বেড়ে যেতে পারে ওজন।
জেনে নেওয়া যাক গবেষণায় পাওয়া এমন ১০ খাবারের কথা, যেগুলো রক্তে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কর্টিসলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
১। কলা: পটাশিয়াম আর ভিটামিন বি৬-এর খুবই ভালো উৎস কলা। ‘অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট’ হিসেবে কলার নামডাক আছে। কলা খেলে মন ভালো থাকে। কর্টিসল নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ‘হ্যাপি হরমোন’ নিঃসরণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে কলা।
২। রসুন: রান্নাঘর থেকে প্রতিদিন ৪ গ্রাম রসুন আপনার স্ট্রেস হরমোন কমাতে জাদুর মতো কাজ কর।
৩। পালংশাক: আমাদের পরিচিত খাবারের ভেতর কম দামি এই পালংশাক। এর রয়েছে আশ্চর্য স্বাস্থ্যগুণ।
৪। ডিম: জন্মের ছয় মাস থেকে শুরু করে আমৃত্যু প্রতিদিন একটি ডিম আপনি খেতেই পারেন। তবে বিশেষ কোনো শারীরিক অবস্থার কারণে ডিমে নিষেধাজ্ঞা থাকলে আলাদা কথা।
৫। কাজুবাদাম: অ্যামেরিকান কলেজ অব নিউট্রিশন জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে, বাদামের ম্যাগনেশিয়াম শরীরে কর্টিসলের মাত্রা কমিয়ে ভারসাম্য রক্ষা করতে খুবই সহায়ক। আর বাদামের ভেতর কাজু সবচেয়ে ভালো। এ জন্য প্রতিদিন চার থেকে পাঁচটি বাদামই যথেষ্ট। মিষ্টিকুমড়ার বীজও একই কাজ করে।
৬। ডার্ক চকলেট: প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ গ্রাম ডার্ক চকলেট আপনার মানসিক স্বাস্থ্যে ইতিবাচকভাবে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।
৭। ব্রকলি: দৈনিক এক কাপ ব্রকলি খেলেই কর্টিসলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
৮। গ্রিন টি: গ্রিন টিতে থাকা অ্যামিনো অ্যসিড আপনাকে চাপ ও ভারমুক্ত রাখতে সহায়ক।
৯। লাল চাল: লাল চালের কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে। কর্টিসল নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
১০। এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল: অলিভ অয়েলও মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক। আর তা এক্সট্রা ভার্জিন হলে আরও বেশি কার্যকর।
সুস্থ থাকুন, নিজেকে এবং পরিবারকে ভালোবাসুন। আমাদের লেখা আপনার কাছে কেমন লেগেছে এবং আপনার যদি কোনো প্রশ্ন অথবা মতামত থেকে থাকে তবে নিচে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন। আর আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্টটি পৌঁছে দিতে শেয়ার করুন। সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।