Home / স্বাস্থ্য টিপস / প্রেসার বেড়ে ঘাড় ব্যথা হলে সাথে সাথে যা করবেন

প্রেসার বেড়ে ঘাড় ব্যথা হলে সাথে সাথে যা করবেন

আশা করি সবাই ভাল আছেন। আজ আপনাদের মাঝে অরেকটি আর্টিকেল নিয়ে হাজির হলাম। আজ আপনাদের জানাবো প্রেসার বেড়ে ঘাড় ব্যথা(Neck pain) হলে সাথে সাথে কি করবেন সে সম্পর্কে। উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসার মুহুর্তেই বয়ে আনতে পারে চরম পরিণতি। করোনারি হার্ট ডিজিজ, হার্টফেল, স্ট্রোক, কিডনি(Kidney) অকেজো ইত্যাদি মারাত্মক সমস্যা দেখা দিতে পারে উচ্চ রক্তচাপের ফলে।প্রেসার

প্রেসার বেড়ে ঘাড় ব্যথা হলে সাথে সাথে যা করবেন

কেন হাই ব্লাড প্রেসার(Blood pressure) হয়, হলে করণীয় কি? জানাচ্ছেন বাংলাদেশ আকুপ্রেশার সোসাইটির আকুপ্রেশার বিশেষজ্ঞ মনোজ সাহা রক্ত চাপ যখন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়, তখন উচ্চ রক্তচাপ(High blood pressure) হয়। মস্তিস্ক মেরুজল হৃৎপিণ্ডের তৃতীয় অংশ থেকে ওপরে উঠে স্নায়ুতন্ত্রে প্রবেশ করে। যখন মস্তিষ্ক মেরুজলে লবণের পরিমাণ বেড়ে যায়, তখন বহির্গত নালির বাল্বের ভেতরে অবস্থিত চুলের মতো সূক্ষ কোষগুলো শক্ত হয়ে যায়।

এর ফলে মস্তিষ্ক মেরুজলের প্রবাহ ব্যাহত হয়। হৃৎপিণ্ডের তৃতীয় অংশে এই মস্তিষ্ক মেরুজলকে ওপরে ঠেলার জন্য যে চাপের সৃষ্টি হয় তাই উচ্চ রক্তচাপ(Blood pressure)। অনেক সময় দুশ্চিন্তাজনিত কারণ থেকেও এটি হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপের ফলে করোনারি হার্ট ডিজিজ, হার্টফেল, স্ট্রোক, কিডনি অকেজো ইত্যাদি মারাত্মক সমস্যা দেখা দেয়।

লক্ষণ –
মাথাব্যথা, বিশেষ করে পেছনের দিকে ব্যথা(Pain)। অনেক সময় সকালে ঘুম থেকে উঠার পর ব্যথা অনুভূত হয়। দু-চার ঘণ্টা পর কমে যায়, মাথা ঘোরা, বুক ধড়ফড় করা, মনোযোগের অভাব, অল্পতে হাঁপিয়ে যাওয়া, মাংসপেশির দুর্বলতা, পা ফোলা, বুকে ব্যথা, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, ক্লান্তিবোধ, ঘাড় ব্যথা। কারণ, ধূমপান(Smoking), ওজন বেশি, অলস জীবন-যাপন, খাবারের সঙ্গে বেশি লবণ গ্রহণ, নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন, বংশগত কারণে, ক্রনিক কিডনি রোগ, অ্যাড্রেনাল ও থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা।

পথ্য –
এক মাস সকাল ও সন্ধ্যায় দুই চামচ করে থানকুনি পাতার রস সেবন করুন। অথবা রসুন(Garlic) ১ কোয়া করে দুবেলা ভাতের সঙ্গে ১৫ দিন খান। ৪টি তুলসীপাতা ও ২টি নিমপাতা ১ চা চামচ পানিতে চটকিয়ে খেয়ে নিন। ১০০ গ্রাম পানিতে মাঝারি আকারের অর্ধেকটা লেবু(Lemon) চিপে দিনে ২-৩ বার পান করতে হবে।

যা করবেন –
ওজন কামানো, লবণ ও সোডিয়ামযুক্ত খাদ্য কম গ্রহণ, হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা ও শারীরিক পরিশ্রম(Physical exertion) করা, রেড মিট বর্জন করা। রিফ্লেক্সো্লজি বিন্দুসমূহ ৩, ৪, ৮, ২৫, ২৮, ৩৬, NP, MF উচ্চ রক্তচাপের জন্য ওপরের প্রতিটি পয়েন্টে ৭০ থেকে ৮০ বা ২ মিনিট একটি সুচালো ভোঁতা কাঠি দ্বারা চাপ প্রয়োগ করতে হয়। প্রতি ১ সেকেন্ডে ১টি করে চাপ দিতে হবে।

৬ ঘণ্টা পর পর দিনে সর্বোচ্চ ৩-৪ বার রিফ্লেক্সোলজি করা যায়। একেবারে খালি পেটে অথবা ভরা পেটে রিফ্লেক্সোলজি(Reflexology) করা ঠিক নয়। খাওয়ার আধ ঘণ্টা পরে করা যাবে। রোগের বয়স যত দিন তার ১ : ১০ ভাগ সময়কাল পর্যন্ত থেরাপি করলে রোগ নিরাময় সম্ভব। টিপস উচ্চ রক্তচাপ(Blood pressure) হলে চোখ বন্ধ করে দুই হাতের কনিষ্ঠ আঙুল কানের মধ্যে দিয়ে ২-৩ মিনিট কান ঝাঁকুনি দিন।

ঘাড়ে ব্যথার কারণ ও প্রতিকার
আমাদের বেশির ভাগ মানুষই জীবনের কোনো এক সময় ঘাড়ের ব্যাথায় ভোগেন। মেরুদণ্ডের ঘাড়ের অংশকে মেডিক্যাল ভাষায় সারভাইক্যাল স্পাইন বলে। মেরুদণ্ডের ওপরের সাতটি কশেরুকা ও দুই কশেরুকার মাঝখানের ডিস্ক, পেশি ও লিগামেন্ট(Ligament) নিয়ে সারভাইক্যাল স্পাইন বা ঘাড় গঠিত। মাথার হাড় (স্কাল) থেকে মেরুদণ্ডের সপ্তম কশেরুকা পর্যন্ত ঘাড় বিস্তৃত।

আট জোড়া সারভাইক্যাল স্পাইন নার্ভ (স্নায়ু) ঘাড়, কাঁধ, বাহু, নিচু বাহু এবং হাত ও আঙুলের চামড়ার অনুভূতি ও পেশির মুভমেন্ট প্রদান করে। এ জন্য ঘাড়ের সমস্যায় রোগী ঘাড়, কাঁধ, বাহু ও হাত বা শুধু হাতের বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। ঘাড়ের সমস্যা পুরুষের তুলনায় নারীদের বেশি হয়।

ঘাড়ে দুই ধরনের ব্যথা হয়ঃ
১. লোকাল বা স্থানীয় ব্যথা
২. রেফার্ড পেইন বা দূরে ছড়িয়ে যাওয়া ব্যাথা।

ঘাড়ব্যথার কারণঃ অনেকগুলো কারণে ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য
১. সারভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস
২. সারভাইক্যাল স্পনডাইলাইটিস
৩. সারভাইক্যাল স্পনডাইলিসথেসিস
৪. সারভাইক্যাল রিবস
৫. সারভাইক্যাল ক্যানেল স্টেনোসিস বা স্পাইনাল ক্যানাল সরু হওয়া
৬. সারভাইক্যাল ডিক্স প্রলেপস বা হারনিয়েশন, যেখানে হারনিয়াটেড ডিস্ক নার্ভের ওপর চাপ প্রয়োগ করে
৭. মাংসপেশী, হাড়, জোড়া, লিগামেন্ট, ডিস্ক (দুই কশেরুকার মাঝখানে থাকে) ও স্নায়ুর রোগ বা ইনজুরি
৮. অস্বাভাবিক পজিশনে নিদ্রা বা অনিদ্রা
৯. উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ(Heart disease)
১০. হাড় ও তরুণাস্থির প্রদাহ ও ক্ষয়
১১. অস্টিওপরোসিস বা হাড়ের ক্ষয় ও ভঙ্গুরতা রোগ
১২. হাড় নরম ও বাঁকা হওয়া
১৩. রিউমাটয়েড-আর্থ্রাইটিস ও সেরো নেগেটিভ আর্থ্রাইটিস
১৪. সারভাইক্যাল অস্টিও-আর্থ্রাইটিস
১৫. ফাইব্রোমায়ালজিয়া

উপসর্গঃ
১. ঘাড়ব্যথা এবং এই ব্যথা কাঁধ, বাহু, হাত ও আঙুল পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে
২. কাঁধ, বাহু, হাত ও আঙুলে অস্বাভাবিক অনুভূতি বা অবশ ভাব
৩. বাহু, হাত ও আঙুল দুর্বল হতে পারে
৪. সব সময় ঘাড় ধরে বা জমে (স্টিফনেস) আছে এবং আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে
৫. ঘাড়ের মুভমেন্ট ও দাঁড়ানো অবস্থায় কাজ করলে ব্যথা(Pain) বেড়ে যায়

ল্যাবরেটরি পরীক্ষা- নিরীক্ষা ঘাড়ব্যথার চিকিৎসা দেয়ার আগে কারণ নির্ণয় করার জন্য প্রয়োজনীয় ল্যাবরেটরি পরীক্ষা করতে হবে।

চিকিৎসা ঘাড়ব্যথার চিকিৎসা এর কারণগুলোর ওপর নির্ভর করে। চিকিৎসার মূল লক্ষ হল, ১. ব্যথা(Pain) ও অন্যান্য উপসর্গ নিরাময় করা, ২. ঘাড়ের মুভমেন্ট স্বাভাবিক করা।

কনজারভেটিভ চিকিৎসা, ১.অ্যান্টিইনফ্যামেটরি ওষুধ সেবন, ২.ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা এটিই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াবিহীন আধুনিক চিকিৎসাপদ্ধতি। বিভিন্ন ধরনের ফিজিওথেরাপিচিকিৎসা কারণগুলোর উপর নির্ভর করে।

এখানে বিভিন্ন ম্যানুয়াল বাম্যানুপুলেশন থেরাপি, থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ এবং এই চিকিৎসাই ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রোমেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট; যেমন-

ইন্টারফ্যারেনশিয়াল থেরাপি, অতি লোহিত রশ্মি, মাইক্রো-ওয়েভ ডায়াথারমি,আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি, শর্টওয়েভ ডায়াথার্মি ও ইন্টারমিটেন্ট ট্র্যাকশন, ট্রান্সকিউটেনিয়াস ইলেক্ট্রিক্যাল স্টিমুলেশন ইত্যাদি। এবং কিছু কিছু রোগের ক্ষেত্রে দুই-তিন সপ্তাহ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে সম্পূর্ণ বিশ্রামে থেকে চিকিৎসা নিতে হয়।

সার্জিক্যাল চিকিৎসা
কনজারভেটিভ বা মেডিক্যাল চিকিৎসায় ভালো না হলে, ব্যথা(Pain) ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকলে, স্নায়ু সমস্যা দেখা দিলে, বাহু, হাত ও আঙুলে দুর্বলতা এবং অবশ ভাব দেখা দিলে এবং প্রস্রাব বা পায়খানার নিয়ন্ত্রণ না থাকলে দ্রুত সার্জিক্যাল চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে বিভিন্ন ধরনের সার্জিক্যাল চিকিৎসা(Surgical treatment) কারণগুলোর উপর নির্ভর করে।

করণীয়
১. সামনের দিকে ঝুঁকে দীর্ঘক্ষণ কাজ করবেন না।
২. মাথার ওপর কোনো ওজন নেবেন না।
৩. প্রয়োজনীয় বিশ্রাম(Rest) নিতে হবে।
৪. শক্ত বিছানায় ঘুমাবেন।
৫. শোবার সময় একটা মধ্যম সাইজের বালিশ ব্যবহার করবেন, যার অর্ধেকটুকু মাথা ও অর্ধেকটুকু ঘাড়ের নিচে দেবেন।
৬. তীব্র ব্যথা কমে গেলেও ঘাড় নিচু বা উঁচু করা, মোচড়ানো (টুইসটিং) পজিশন বন্ধ করা।
৭. অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম(Hard work) কমাতে হবে।
৮. সেলুনে কখনোই ঘাড় মটকাবেন না।
৯. কাত হয়ে শুয়ে দীর্ঘক্ষণ পড়বেন না বা টেলিভিশন(Television) দেখবেন না।
১০. কম্পিউটারে কাজ করার সময় মনিটর চোখের লেভেলে রাখবেন।

সুস্থ থাকুন, নিজেকে এবং পরিবারকে ভালোবাসুন। আমাদের লেখা আপনার কেমন লাগছে ও আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে তবে নিচে কমেন্ট করে জানান। আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্টটি পৌঁছে দিতে দয়া করে শেয়ার করুন। পুরো পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

Check Also

শরীরের তাপ

শরীরের তাপ কমায় যে ৮টি খাবার

শরীরের তাপ কমায় যে ৮টি খাবার। হিট অ্যালার্ট চলছে দেশজুড়ে। তীব্র গরমে পুড়ছে প্রকৃতি। দাবদাহের ...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *