পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়। পিরিয়ড (Period) নারীদের জন্য একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। প্রতি মাসে পিরিয়ড নারীদের গর্ভধারণের জন্য প্রস্তুত করে। কিন্তু পিরিয়ডের সময় খিটখিটে মেজাজ, মাথাব্যথা, পেটব্যথা, কোমড়ব্যথা, হাত জ্বালা-পোড়া করা, বমি বমিভাবও মাথাব্যথাসহ বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে।
পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় জেনে নিন
বেশির ভাগ নারীর পিরিয়ডের সময় ব্যথা (Pain) হয়। ব্যথা অনেকের কম আবার অনেক অসহনীয় পর্যায়ে চলে যেতে পারে। কিছু ঘরোয়া প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আপনি পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে পারেন। পিরিয়ডের সময় ভিটামিন (Vitamin) এবং মিনারেল-জাতীয় খাবার খাওয়া জরুরি। প্রতিদিনের খাবার তালিকায় ভিটামিনসমৃদ্ধ খাবার রাখুন। তাই এই সমস্যার সমাধানের জন্য ঘরোয়া উপায়ের ওপর জোর দেয়াই শ্রেয়।
পিরিয়ড কী
প্রতি চন্দ্রমাস পরপর হরমোনের প্রভাবে পরিণত মেয়েদের জরায়ু চক্রাকারে যে পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যায় এবং রক্ত (Blood) ও জরায়ু নিঃসৃত অংশ যোনিপথে বের হয়ে আসে তাকেই ঋতুচক্র বলে। মাসিক চলাকালীন পেটব্যথা, পিঠব্যথা, বমি বমি ভাব হতে পারে। আর যাদের এই মাসিক ঋতুচক্র প্রতি মাসে হয় না অথবা দুই মাস আবার কখনও ৪ মাস পরপর হয়, তখন তাকে অনিয়মিত পিরিয়ড (Period) বলে। অনিয়মিত পিরিয়ড নারীদের বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে।
পিরিয়ডের সময় ব্যথা কমাতে কী করবেন
১। গরম পানির সেঁক
পিরিয়ডের ব্যথায় গরম পানির সেঁক খুব উপকারী। হট ব্যাগের মধ্যে গরম পানি (Warm water) নিয়ে পেটে সেঁক ও গরম পানি দিয়ে গোসলও করতে পারেন। এটিও আপনার পেটের ব্যথা কমিয়ে স্বস্তি দেবে।
২। আদা
পেটের ব্যথা কমাতে আদার রস (Ginger Juice) বেশ উপকারী। এ সময় আদা চা পান করলে এই সময় বেশ ভালো উপকার পাওয়া যায়। এ ছাড়া টুকরো আদার সঙ্গে মধু (Honey), চিনি ও গরম পানি যোগ করে তিন-চারবার পান করতে পারেন।
৩। পেঁপে
পিরিয়ডের ব্যথা রোধের জন্য পেঁপে (Papaya) খাওয়া বেশ কার্যকর। পিরিয়ডের সময় নিয়মিত কাঁচা পেঁপে খান। কাঁচা পেঁপে পিরিয়ডের ব্যথা কমিয়ে দেয়।
৪। ল্যাভেন্ডার অয়েল
পিরিয়ডের ব্যথার সময় পেটে কয়েক ফোঁটা ল্যাভেন্ডার অয়েল (Lavender oil) মালিশ করুন। ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে এটি আপনার ব্যথা কমিয়ে দেবে অনেকখানি।
৫। অ্যালোভেরা রস
অ্যালোভেরা রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে একটি জুস তৈরি করে ফেলুন। পিরিয়ডের ব্যথার সময় এটি পান করুন। দিনে কয়েকবার এটি পান করুন। ব্যথা অনেকখানি কমিয়ে দেবে এই পানীয়টি।
৬। পানি ও পানীয় জাতীয় খাবার
পিরিয়ডের সময় প্রচুর পরিমাণ পানি (Water) এবং পানিজাতীয় খাবার খান। কেননা এই সময়টায় শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়।
৭। হালকা ব্যায়াম করুন
ব্যথার কারণে পিরিয়ডের সময় ব্যায়াম (Exercise) করতে পারেন না অনেকে। কিন্তু একটি সমীক্ষা অনুযায়ী সহজ-সরল যোগব্যায়াম, হাঁটাচলা করলে ব্যথা কমতে পারে। তবে এ সময় ভারী কোনও কাজ করা উচিত নয়। ব্যায়াম করার ফলে এন্ডোর্ফিন নিষ্কৃত হয়। যা পেশীর মোচড় কম করার জন্য প্রাকৃতিক ওষুধের কাজ করে।
ফ্যাট জাতীয় খাবার, অ্যালকোহল, ক্যাফেইন (Caffeine) থেকে দূরে থাকুন- ঋতুস্রাবের সময় অধিক তেল ও মশলাযুক্ত খাবার, মদ, ক্যাফেইন যুক্ত পানীয় গ্রহণ করা উচিত নয়। এর ফলে শরীরে পানির অভাব দেখা দেয় এবং পেট ফুলে যেতে পারে।
কোন ধরনের খাবার পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে সাহায্য করবে?
ডার্ক চকলেট (Dark chocolate), কলা, ব্রকলি, পালংশাক, কমলালেবু, এক মুঠো বাদাম (পেস্তা, কাজু), সূর্যমুখীর বীজ, ক্যামোমাইল চা, আদা চা, গ্রিন টি ইত্যাদি।
এ ছাড়া পিরিয়ডে তীব্র পেট ব্যথা অস্বাভাবিক পর্যায়ে চলে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। পিরিয়ড ক্র্যাম্পস মাসের এই ৫-৬ দিন আপনাকে কাবু করে দিতে বেশ বদ্ধপরিকর। তবে নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন, পর্যাপ্ত বিশ্রাম (Rest) ও সুষম খাবার দিয়েই আপনি এই ক্র্যাম্পসের সাথে যুদ্ধ বেশ ভালোভাবে জয় করতে পারবেন। আর হ্যাঁ, পিরিয়ডের সময় সঠিকভাবে হাইজিন মেনটেইন করুন।
আমাদের লেখা আপনার কাছে কেমন লেগেছে এবং আপনার যদি কোনো প্রশ্ন অথবা মতামত থেকে থাকে তবে নিচে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন। আর আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্টটি পৌঁছে দিতে শেয়ার করুন। সুস্থ থাকুন, নিজেকে এবং পরিবারকে ভালোবাসুন।