Home / ত্বকের যত্ন / আপনার হাতের যত্ন নেবেন যেভাবে

আপনার হাতের যত্ন নেবেন যেভাবে

 আপনার হাতের যত্ন নেবেন যেভাবে। শীতের সময় অনেকের হাতের চামড়া ওঠে। যা রোধ করা যায় নানানভাবে। সারাদিনে সকল কাজের চাপ সামলে নিতে হয় দুই হাত দিয়ে। তাই এই অঙ্গগুলো অবহেলা করা মোটেই উচিত না। যে হাতে বেশি কাজ হয় সেটার ত্বক (Skin) শুষ্ক হলে দ্রুত বয়সের ছাপ পড়ে। এছাড়াও পরিচর্যার অভাবে হাতে চুলকানি, খসখসে ও লালচেভাব বা জ্বলুনির সমস্যা দেখা দিতে পারে।হাতের যত্ন

আপনার হাতের যত্ন নেবেন যেভাবে

ভারতের ‘স্কিনক্রাফট ল্যাবরেটরিস’য়ের ওয়েবসাইটে জ্যেষ্ঠ প্রসাধনী উন্নয়ক ডা. লতা গঞ্জি হাতের যত্ন নেওয়ার কৌশল সম্পর্কে জানান। তিনি বলেন, “যদিও হাতে বয়সে ছাপ (Age impression) পড়া এড়ানো সম্ভব নয়। তবে তাৎক্ষণিক হাতের পরিচর্যা করা সম্ভব যা হাতকে দেখতে মসৃণ, কোমল ও স্বাস্থ্যকর লাগে।”

হাতের যত্নের প্রয়োজনীয়তা
হাতের ত্বক (Hand skin) অনেক বেশি সংবেদনশীল আর অন্যান্য অংশের তুলনায় পাতলা হওয়াতে খুব সহজেই বয়সের ছাপ পড়ে। এছাড়াও হাত অনেক বেশি দূষণ, ময়লা, কড়া রাসায়নিক উপাদান ও সূর্যালোকের সংস্পর্শে আসে। কোনো প্রকার কাপড় বা প্রসাধনী এর সুরক্ষা নিশ্চিত না করার ফলে হাতের ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই মুখে ত্বকের পাশাপাশি হাতের ত্বক পরিচর্যার জন্য সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে।

হাত পরিষ্কার করা
কোভিড-১৯ চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে যে, হাত পরিষ্কার রাখা ও যত্ন নেওয়া কতটা জরুরি। সব সময় সাবান (Soap) দিয়ে পরিষ্কার রাখা উচিত। হাতে কোনো ধরনের অলঙ্কার যেমন- আংটি নিয়মিত পড়লে সেগুলো ভালোভাবে পরিষ্কার করে ব্যবহার করা প্রয়োজন। না হলে এর মাধ্যমে হাত আবার নোংরা হয়ে যেতে পারে।

হ্যান্ড ক্রিম ব্যবহার
লোশন বা অন্যান্য প্রসাধনীর তুলনায় হ্যান্ড ক্রিম (Hand cream) হাতের যত্নে বেশি কার্যকর। এগুলো দীর্ঘস্থায়ী এবং স্বাভাবিকভাবে কিছুটা ঘন। হাত যদি খুব বেশি শুষ্ক হয়ে থাকে তাহলে তেল-ভিত্তিক হ্যান্ড ক্রিম ব্যবহার করা যায়। গ্লিসারিন, আলফা হাইড্রোক্সি অ্যাসিড এবং ইউরিয়া সমৃদ্ধ উপকরণ এক্ষেত্রে খুব ভালো কাজ করে।

হাতের ত্বকের ওপরের স্তর আর্দ্রতার অভাবে শুষ্ক হয়ে পড়ে এবং ফাটল দেখা দেয়। ‘ইমুলিয়েন্টস’ এক্ষেত্রে হাত কোমল রাখতে সহায়তা করে। আর খালি হয়ে যাওয়া ত্বকের কোষ পরিপূর্ণ করে হাত মসৃণ রাখতে ভূমিকা রাখে।

কিউটিকল সুরক্ষিত রাখা
কিউটিকল নখ এবং চারপাশে ত্বককে সব রকমের সংক্রমণ (Infection) থেকে সুরক্ষিত রাখে। যদি কিউটিকল কেটে ছোট করে ফেলা হয় তাহলে খুব সহজে ব্যাক্টেরিয়া ও জীবাণু নখের ভেতরে প্রবেশ করতে পারে। ফলে সংক্রমণ ও প্রদাহ বৃদ্ধি পায়।

তাই ম্যানিকিউর করার সময় কিউটিকল ট্রিম না করাই ভালো। আর কেউ যদি করতে চান তাহলে প্রথমে এগুলোকে নরম করে নিতে হবে। প্রথমে আঙ্গুল কুসুম গরম পানিতে ডুবিয়ে নিতে হবে অথবা গোসলের পরের সময় বেছে নিতে হবে। এই সময় কিউটিকল রিমুভার দিয়ে উল্টো দিকে চাপ দিয়ে কিউটিকেল কেটে নিতে হবে।

এরপরে ভালোমতো মশ্চারাইজার (Moisturizer) ব্যবহার করতে হবে। অনেক সময় কিউটিকল ট্রিমিং করার ফলে ‘পারোনিকিয়া’ নামক সংক্রমণের দেখা দিতে পারে। এর ফলে নখের চারপাশে লালচে ও টনটনে ভাবের সৃষ্টি হয়। অনেক ক্ষেত্রে পূঁজ জমে এবং নখ আলগা হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। মৃদু ‘পারোনিকিয়া’ ঘরেই উপশম করা যায়। তবে এর মাত্রা তীব্র হলে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণের প্রয়োজন পড়ে।

নিয়মিত মালিশ করা
নিয়মিত হাত মালিশ করার ফলে এর সৌন্দর্য দৃশ্যমানভাবে প্রকাশ পায় আর স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। হাত মালিশের ফলে নানা রকমের উপকারিতা পাওয়া যায়, যেমন-

ব্যথা হ্রাস

মানসিক চাপ ও উদ্বেগ হ্রাস পাওয়া

হাতের শক্তি বৃদ্ধি

মন ভালো হয়ে যাওয়া

ঘুম ভালো হওয়া

হাত এক্সফলিয়েট করা
সপ্তাহে অন্তত একবার মৃদু স্ক্রাব দিয়ে হাত এক্সফলিয়েট করতে হবে। এতে হাত থেকে মৃত কোষ দূর হয়ে মসৃণ ও কোমল লাগবে। বাজারের স্ক্রাব ব্যবহার করতে না চাইলে নিজেই স্ক্রাবার তৈরি করে নেওয়া যায়। যেমন- চিনি, জলপাইয়ের তেল (Olive oil) এবং লেবুর রস মিশিয়ে স্ক্রাব তৈরি করে হাত মালিশ করা যায়। স্ক্রাবিংয়ের পরে হাতে ময়েশ্চারাইজার লাগাতে ভুললে চলবে না।

ফাটার চিকিৎসা করা
শীতকালে অধিকাংশের অভিযোগ থাকে শুষ্ক ও ফাটা হাতের তালু নিয়ে। ‘কেরাটোলাইসিস এক্সফোলিয়াটিভা’ হাতের এমন একটি সাধারন সমস্যা, যেখানে হাতে চামড়া ওঠে এবং তালু অনেক বেশি খসখসে হয়ে যায়।

অনেকের এই সময় ঠাণ্ডা বাতাসের কারণে হাতে সমস্যা যেমন- লালচেভাব, চুলকানি এবং রক্তক্ষরণও দেখা দিতে পারে। এমন ক্ষেত্রে হাত সব সময় আর্দ্র রাখার চেষ্টা করতে হবে। হ্যান্ড ক্রিম, পেট্রোলিয়াম জেলি, জোজোবা তেল (Jojoba oil) খুব ভালো কাজ করে যা ত্বকের ফাটাভাব কমাতে ভূমিকা রাখে।

নখ ছোট রাখা
হাতের পরিচর্যা এবং ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার মধ্যে নখ কেটে ছোট করা করা অন্যতম। নখ খুব বেশি লম্বা থাকলে তাতে সহজেই ময়লা আটকে ধরে। জীবাণু ও ব্যাক্টেরিয়া (Bacteria) এখানে বাসা বাঁধে। ফলে হাতে হতে পারে ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ। এছাড়াও বড় নখে ময়লা আটকে খাবারের মাধ্যমে পেটে যেয়ে খাবারের বিষক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

ম্যানিকিউর করা
নিয়মিত ম্যানিকিউর করা হাত পরিষ্কার ও নখ সুন্দর রাখতে সহায়তা করে। সুন্দর আকারে নখ কাটা, কিউটিকল ছেটে নেওয়া ইত্যাদির মাধ্যমে ম্যানিকিউর নখের বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে। শীতকালে ম্যানিকিউরের সময় হাতের মালিশ অনেক বেশি আরাম দেয় এবং মানসিক চাপমুক্ত করতে সহায়তা করে। এতে রক্ত সঞ্চালন (Blood circulation) বাড়ে। ফলে হাত প্রশান্ত হয়, ত্বক কোমল হয় এবং বলিরেখা হ্রাস পায়।

সঠিক খাদ্যাভ্যাস
পুষ্টিকর খাবার আঙ্গুলের নখ সুন্দর রাখতে এবং হাতের ত্বক সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। খাবারে প্রোটিন (Protein), অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন বি এবং ভিটামিন ই (Vitamin E) সমৃদ্ধ খাবার যোগ করা ত্বক সুস্থ ও নখ মজবুত রাখতে সহায়তা করে। সুষম খাবার গ্রহণ সার্বিকভাবেই ত্বকের কোমলতা ও মসৃণভাব ফুটিয়ে তুলতে সহায়ক।

মোদ্দাকথা হল
হাতের যত্ন নেওয়া খুব বেশি জটিল কোনো কাজ নয়। একটু গুরুত্ব সহকারে নিয়মিত হাত পরিচর্যা করলে দেখতে সুন্দর লাগে। নিজে থেকেই একটা রুটিন তৈরি করে সে অনুযায়ী হাতের পরিচর্যা করলে আর উন্নত প্রসাধনী ব্যবহারে দীর্ঘদিন হাতের তারুণ্য ধরে রাখার যায়।

আমাদের লেখা আপনার কাছে কেমন লেগেছে এবং আপনার যদি কোনো প্রশ্ন অথবা মতামত থেকে থাকে তবে নিচে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন। আর আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্টটি পৌঁছে দিতে শেয়ার করুন। সুস্থ থাকুন, নিজেকে এবং পরিবারকে ভালোবাসুন।

Check Also

তৈলাক্ত ত্বক

তৈলাক্ত ত্বক ভালো রাখতে ঘরোয়া ১০টি উপায়

ত্বকে থাকা সেবাসিয়াস গ্রন্থি থেকে অতিরিক্ত সিবাম উৎপাদনের জন্য ত্বক তৈলাক্ত হয় । সিবাম হলো ...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *