Home / বিউটি টিপস / রূপচর্চার উপাদান হিসাবে আমের খোসা ও পাতার ব্যবহার

রূপচর্চার উপাদান হিসাবে আমের খোসা ও পাতার ব্যবহার

আমের স্বাদে গুণমুগ্ধ আমরা সবাই। তা–ই বলে আমের পাতা(mango leaf) আর খোসাও কিন্তু ফেলনা নয়। এগুলো যেমন খাওয়া যায়, তেমন রূপচর্চার উপাদান হিসেবেও ব্যবহার করা সম্ভব। অন্তত বিজ্ঞান তা–ই বলছে।আমের খোসা

রূপচর্চার উপাদান হিসাবে আমের খোসা ও পাতার ব্যবহার

আমপাতা
আমের কচি নরম পাতা অনেক দেশেই রান্না করে খাওয়া হয়। কারণ, এ পাতাকে পুষ্টিকর(Nutritious) হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ পাতা দিয়ে বানানো হয় চা, এমনকি সাপ্লিমেন্টও। হাজার বছর আগে থেকে আয়ুর্বেদ এবং ঐতিহ্যবাহী চাইনিজ চিকিৎসায় বিভিন্ন অসুখ নিরাময়ে আমপাতার ব্যবহার হয়ে আসছে। কিছু ব্যাধি নিরাময়ে আমপাতা যে সত্যি অনেক কাজের, তা বেশ কয়েকটি গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। এর ভেতর আছে ডায়াবেটিস(Diabetes), আলসার, ক্যানসার ইত্যাদি রোগ নিরাময়ের ক্ষমতা।

অতি সম্প্রতি ফিলিপাইনের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মলিকুলার বায়োলজি এবং ইউনিভার্সিটি অব দ্য ফিলিপিনস লস বানিয়োসের যৌথ গবেষণায় উঠে এসেছে, আমপাতার নির্যাস ত্বকের যত্নের(Skin care) বিভিন্ন পণ্যের প্রধান উপাদান হওয়ার ক্ষমতা রাখে। কারণ, এতে রয়েছে উচ্চমানের অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট এবং অনেক অ্যান্টি–এজিং ও হোয়াইটেনিং উপাদান।

আমপাতায় রয়েছে পলিফেনলিক যৌগ। এতে আছে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট(Anti-oxidant) এবং অ্যান্টি–ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান। আমপাতার এ উপাদান ইলাস্টেজ এবং টাইরোসিনেসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ইলাস্টেজ এমন এক এনজাইম, যা ত্বকের ইলাস্টিন হজম করে। ফলে ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ পড়ে। আর টাইরোসিনেসের জন্য ত্বক(Skin) উজ্জ্বলতা হারায়।

এর আগে অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে, শরীরের প্রতি কেজি ওজনের বিপরীতে ১০০ মিলিগ্রাম করে (৬০ কেজি ওজনের মানুষের জন্য ৬০০০ মিলিগ্রাম) আমপাতার নির্যাসের সাপ্লিমেন্ট খেলে শরীরে কোলাজেনের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। কোলাজেন প্রোটিনের জন্য ত্বকে স্থিতিস্থাপকতা বজায় থাকে আর এর অভাবে সূক্ষ্ম বলিরেখা(Wrinkle line) দেখা দেয়।

আমাদের ত্বকে স্ট্যাফিলোকক্কাস অরিয়াস ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের বিরুদ্ধেও বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে আমপাতা। আমপাতায় আছে ম্যাঞ্জিফিরিন নামের একটি অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট(Anti-oxidant) । এটি সোরিয়াসিস রোগের লক্ষণ যেমন চুলকানি(Itching), শুকনা খসখসে ভাব ইত্যাদি উপশম করতে পারে।

আমপাতার পলিফেনল যেকোনো ক্ষত সারাতে পারে। ক্ষত সারানোর ব্যাপারটা অনেক আগে থেকে আয়ুর্বেদশাস্ত্রে চর্চা করা হচ্ছে। যেমন, কারও কোথাও পুড়ে গেলে চিকিৎসা হিসেবে আমপাতা পোড়া ছাই লাগিয়ে দিতে বলা হয়। এতে ত্বকে স্বস্তি মেলে।
চুলের পরিচর্যায়(Hair care) আমপাতা প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিশেষ করে চুলের দ্রুত বৃদ্ধিতে। কারণ, আমপাতায় থাকা উচ্চমানের অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট চুলের ফলিকলের ক্ষতি ঠেকাতে সহায়তা করে। চুল(Hair) প্রাকৃতিকভাবে কালো করতে আমপাতায় থাকা ফ্ল্যাভোনয়েড বেশ উপকারী।

আমের খোসা
আমের খোসার পুষ্টিগুণ(Nutrition) কিন্তু ফলের চেয়ে কম নয়। একটি গবেষণার ফলাফলে বলা হয়েছে, আমের চেয়ে আমের খোসার অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিক্যানসার উপাদান অনেক বেশি শক্তিশালী। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ আঁশ, ভিটামিন এ, বি৬, সি, ই, পলিফেনলস ও ক্যারোটিনয়েডস।

আমপাতার মতো আমের খোসার পলিফেনলস ত্বকের বলিরেখা(Wrinkle line) প্রতিরোধ করতে পারে। আর এর ক্যারোটিনয়েড সূর্যের ক্ষতিকর ইউভি রশ্মির ক্ষতি থেকে ত্বককে যেমন সুরক্ষা দেয়, তেমন তা সারিয়েও তুলতে পারে। এ ছাড়া এটি ত্বকের পিগমেন্টেশন ঠিক করে এবং উজ্জ্বলতা বাড়ায়। একই কাজ করে এতে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েড। অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি–ইনফ্ল্যামটরি উপাদান থাকায় ব্রণের সমস্যায়(Acne problem) আমের খোসা ব্যবহার করা যেতে পারে।

শক্ত মজবুত চুলের জন্য আমের খোসা চুলে লাগাতে পারেন। এতে চুলের বৃদ্ধি বাড়বে। খুশকির সমস্যা(Dandruff problem) দূর করতেও আমের খোসা ভালোই কার্যকর।

তবে আমের খোসা ব্যবহারে বেশ সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, এতে রয়েছে ইউরেশিয়োল। এটি এক ধরনের টক্সিক(Toxic) উপাদান যা শরীরে অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন করতে পারে। তাই যাঁদের সেনসিটিভ ত্বক, তাঁরা এটি থেকে দূরে থাকবেন। আর অন্যান্য ত্বকের অধিকারীরা ‘টোয়েন্টি ফোর’ টেস্ট করে ব্যবহার করবেন।

আমের খোসাবাটা ত্বকের একটি নির্দিষ্ট স্থানে লাগিয়ে অপেক্ষা করবেন ২৪ ঘণ্টা বা এক দিন। এর ভেতর যদি ত্বকে কোনো রকম অস্বস্তি, চুলকানি, জ্বালাপোড়া(Burning) না হয়, তাহলে নির্দ্বিধায় এটি বিউটি রুটিনে যোগ করতে পারেন। বেটে ব্যবহার করার চেয়ে, রোদে শুকিয়ে পাউডার করে বানিয়ে ব্যবহার করলে ভালো হয়। আমের খোসার পাউডার দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়।

সুস্থ থাকুন, নিজেকে এবং পরিবারকে ভালোবাসুন। আমাদের লেখা আপনার কেমন লাগছে ও আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে তবে নিচে কমেন্ট করে জানান। আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্টটি পৌঁছে দিতে দয়া করে শেয়ার করুন। পুরো পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

Check Also

মেকআপ

দ্রুত মেকআপ করার ৮টি সহজ পদ্ধতি

রমজানে পুরো মাসব্যাপী রোজা রাখার পর শরীর থাকে ক্লান্ত। এরপর আসে ঈদ। আর সেখানে কর্মব্যস্ত ...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *