Home / স্বাস্থ্য টিপস / ড্রাগন ফলের ৭টি চমকপ্রদ স্বাস্থ্য উপকারিতা জেনে নিন

ড্রাগন ফলের ৭টি চমকপ্রদ স্বাস্থ্য উপকারিতা জেনে নিন

আশা করি সবাই ভাল আছেন। আজ আপনাদের মাঝে অরেকটি আর্টিকেল নিয়ে হাজির হলাম। আজ আপনাদের জানাবো ড্রাগন(Pitaya) ফলের চমকপ্রদ স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে। বাইরের দেশ থেকে আমদানি করা ফলগুলির মধ্যে এটি একটি। ড্রাগন বা স্ট্রবেরি পিয়ার একটি গ্রীষ্মকালিন ফল যা তার প্রাণবন্ত লাল ছিলকা এবং মিষ্টি(Sweet) ও বীজযুক্ত সাঁজের জন্য সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। চমৎকার আকৃতি এবং দারুণ সব পুষ্টিগুণে ভরপুর এই সুপারফুড স্বাস্থ্য(Health) সচেতনদের নিত্যকার খাদ্যাভ্যাসে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এখানে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত ড্রাগনের ফলের অবাক করা ৭ টি স্বাস্থ্যগুণ দেওয়া হলো –ড্রাগন ফলের

ড্রাগন ফলের ৭টি চমকপ্রদ স্বাস্থ্য উপকারিতা জেনে নিন

১. পুষ্টিতে ভরপুর ড্রাগনঃ ড্রাগন ফল কম ক্যালোরিযুক্ত তবে প্রয়োজনীয় ভিটামিন(Vitamin) এবং খনিজ পদার্থে ভরপুর। এটিতে প্রচুর পরিমাণে ডায়েটরি ফাইবার(Dietary fiber) রয়েছে। এক কাপ (২২৭ গ্রাম) ড্রাগনে কি পরিমাণ পুষ্টিগুণ রয়েছে সেগুলি এখানে দেওয়া হলো –

◼ ক্যালোরি: ১৩৬
◼ প্রোটিন: ৩ গ্রাম
◼ ফ্যাট: ০ গ্রাম
◼ কার্বোহাইড্রেট: ২৯ গ্রাম
◼ ফাইবার: ৭ গ্রাম
◼ আয়রন: দৈনিক চাহিদার ৮%
◼ ম্যাগনেসিয়াম: দৈনিক চাহিদার ১৮%
◼ ভিটামিন সি: দৈনিক চাহিদার ৯%
◼ ভিটামিন ই: দৈনিক চাহিদার ৪%

২. দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে ড্রাগনঃ ড্রাগন ফল(Dragon fruit) অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় অস্থির ফ্রি র‌্যাডিকাল অণু যা কোষের ক্ষতি করে প্রদাহ বা রোগ সৃষ্টি করতে পারে সেগুলির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, নিত্যকার ডায়েটে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার(Food) থাকলে সেটা হৃদরোগ, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস(Diabetes) এবং বাত এর মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে। ড্রাগন ফলে বিভিন্ন ধরণের শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে –

◼ ভিটামিন সি: গবেষণায় দেখা গেছে যে, ভিটামিন সি(Vitamin C) গ্রহণ এবং ক্যান্সারের ঝুঁকির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক আছে। ১২০,৮৫২ জনের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে মাথা ও ঘাড়ের ক্যান্সারের নিম্ন হার ভিটামিন সি(Vitamin C) এর উচ্চ মাত্রার সাথে যুক্ত।
◼ বেটালাইনস: টেস্ট-টিউব সমীক্ষায় ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, বেটালাইন অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে এবং ক্যান্সারের কোষগুলিকে দমন করার ক্ষমতা রাখে।
◼ ক্যারোটিনয়েডস: বিটা ক্যারোটিন এবং লাইকোপিন হলো উদ্ভিদ রঙ্গক যা ড্রাগন ফলকে তার প্রাণবন্ত রঙ দেয়। ক্যারোটিনয়েড সমৃদ্ধ খাবার ক্যান্সার(Cancer) এবং হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাসের সাথে যুক্ত।

৩. ফাইবারে সমৃদ্ধ ড্রাগনঃ ডায়েট্রি ফাইবার হলো ননডাইজেস্টেবল কার্বোহাইড্রেট যার যথেষ্ট পরিমাণে স্বাস্থ্য বেনিফিট রয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মহিলাদের প্রতিদিন ২৫ গ্রাম এবং পুরুষদের ৩৮ গ্রাম ফাইবার(Fiber) গ্রহনের পরামর্শ দেয়। অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট এর মতোই, ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার ফাইবার পরিপূরকসমূহের থেকে বেশী উপকারী। যদিও ফাইবার হজমে(Digestion) ভূমিকা রাখার জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত, কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে যে, এটি হৃদরোগ, টাইপ ২ ডায়াবেটিস এবং ওজন(Weight) নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। যদিও আরও গবেষণা প্রয়োজন, কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার কোলন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে।

৪. অন্ত্র সুরক্ষিত রাখেঃ আপনার অন্ত্রে ৪০০ টিরও বেশি প্রজাতির ব্যাকটিরিয়া(Bacteria) সহ প্রায় ১০০ ট্রিলিয়ন বিবিধ মাইক্রো অর্গানিজ রয়েছে। অনেক গবেষক বিশ্বাস করেন যে অণুজীবের এই সম্প্রদায়টি আপনার স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। মানব এবং প্রাণী উভয় সম্প্রদায়ের অ্যাজমা(Asthma) এবং হৃদরোগের মতো ব্যাধিগুলি আপনার অন্ত্রের ভারসাম্যহীনতার জন্য হয়ে থাকে। ড্রাগন ফলে প্রাক-জৈবিক উপাদান রয়েছে, যেগুলি আপনার অন্ত্রের ভাল ব্যাকটিরিয়ার ভারসাম্যকে উন্নত করতে পারে। প্রিবায়োটিক হলো একটি নির্দিষ্ট ধরণের ফাইবার যা আপনার অন্ত্রে স্বাস্থ্যকর ব্যাকটিরিয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি করে। কিছু কিছু ফাইবার আপনার অন্ত্র সরাসরি হজম(Digestion) করতে পারেনা। তবে আপনার পেটের ব্যাকটেরিয়া সেগুলি হজম করতে পারে। তারা বৃদ্ধির জন্য জ্বালানী হিসাবে ফাইবারটি ব্যবহার করে থাকে। ড্রাগন ফল মূলত দুটি স্বাস্থ্যকর ব্যাকটিরিয়া, ল্যাকটিক অ্যাসিড(Lactic acid) ব্যাকটিরিয়া এবং বিফিডো ব্যাকটিরিয়া বিস্তারে সহয়তা করে। । নিয়মিত প্রিবায়োটিক গ্রহণ করলে পাচনতন্ত্র ভালো থাকে এবং ডায়রিয়ায় সংক্রমণের ঝুঁকি হ্রাস পায়।

৫. ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করেঃ ডায়েটের বিভিন্ন ফ্যাক্টরের উপর শরীরের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা নির্ভর করে। ড্রাগন ফলের ভিটামিন সি(Vitamin C) এবং ক্যারোটিনয়েডগুলি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে এবং শ্বেত রক্তকণিকার ক্ষতিরোধের মাধ্যমে সংক্রমণ(Infection) রোধ করতে পারে। আপনার ইমিউন সিস্টেমের শ্বেত রক্ত কণিকাগুলি ক্ষতিকারক পদার্থকে আক্রমণ করে এবং ধ্বংস করে। শ্বেত রক্তকণিকাগুলি ফ্রি র‌্যাডিকাল দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট হিসাবে, ভিটামিন সি(Vitamin C) এবং ক্যারোটিনয়েড ফ্রি র‌্যাডিকেলগুলিকে নিরপেক্ষ করে দেয় এবং শ্বেত রক্তকণিকা সুরক্ষিত রাখে।

৬. ড্রাগন রক্তে আইরন লেভেল বাড়িয়ে দেয়ঃ ড্রাগন ফল(Dragon fruit) হলো কয়েকটি তাজা ফলগুলির মধ্যে একটি যা আইরন সমৃদ্ধ। আয়রন আপনার সারা শরীর জুড়ে অক্সিজেন পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি খাদ্যকে শক্তিতে রূপান্তরিত করার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দুর্ভাগ্যক্রমে, অনেকের শরীরেই আইরনের ঘাটতি রয়েছে। অনুমান করা হয় যে, বিশ্বের ৩০% জনসংখ্যার আয়রনের ঘাটতি রয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী পুষ্টির ঘাটতি তৈরি করে। লোহার ঘাটতি পূরণ করতে বিভিন্ন ধরণের আয়রন সমৃদ্ধ খাবার(Food)গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। আয়রনের সমৃদ্ধ উৎসগুলির মধ্যে আমিষ, মাছ, শিম, বাদাম(Nut) ইত্যাদি রয়েছে। ড্রাগন ফল আইরনের ঘাটতি পূরণের জন্য বিকল্প হতে পারে কারণ এতে দৈনিক চাহিদার ৮% আইরন থাকে এবং এটিতে পর্যাপ্ত ভিটামিন সি(Vitamin C) রয়েছে যা আপনার শরীরে আয়রন শোষণে সহায়তা করে।

৭. ম্যাগনেসিয়ামের উৎস ড্রাগনঃ এক কাপ পরিমাণ ড্রাগন ফল দৈনিক চাহিদার ১৮% ম্যাগনেসিয়াম(Magnesium) সরবরাহ করে। গড়ে আপনার দেহে ২৪ গ্রাম বা মোটামুটি এক আউন্স পরিমাণ ম্যাগনেসিয়াম থাকে। এটি আপাতদৃষ্টিতে সামান্য পরিমাণ মনে হলেও এই খনিজ পদার্থটি আপনার প্রতিটি কোষে উপস্থিত এবং আপনার দেহের মধ্যকার ৬০০ টিরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশ নেয়।

ড্রাগন একটি সুস্বাদু গ্রীষ্মমন্ডলীয় ফল। এটি চমৎকার স্বাদযুক্ত এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি(Nutrition), প্রিবায়োটিক ফাইবার এবং উপকারী উদ্ভিদ কমপ্লেক্স সমৃদ্ধ। আপনি যদি আপনার ফ্রুট ডায়েটের ক্ষেত্রে কিছু বৈচিত্র্য যুক্ত করতে চান, তবে ড্রাগনের বিকল্প আর নেই। ড্রাগন বিবিধ পুষ্টিগুণে ভরপুর সুস্বাদু একটি ফল(Fruit) যা আপনার খাবার টেবিলকে আরো রঙীন করে তুলবে।

আমাদের লেখা আপনার কেমন লাগছে ও আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে তবে নিচে কমেন্ট করে জানান । আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্টটি পৌঁছে দিতে দয়া করে শেয়ার করুন । পুরো পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

Check Also

বীজ

যে ৬টি বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন

অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর একটি খাবার হচ্ছে বীজ (Seed)। বিভিন্ন ধরনের বীজ ফাইবারের দারুণ উৎস। এছাড়াও ওমেগা ...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *