Home / স্বাস্থ্য টিপস / জেনে নিন পালং শাক এর ৩০টি উপকারিতা সম্পর্কে

জেনে নিন পালং শাক এর ৩০টি উপকারিতা সম্পর্কে

আশা করি সবাই ভাল আছেন। আজ আপনাদের মাঝে অরেকটি আর্টিকেল নিয়ে হাজির হলাম। আজ আপনাদের জানাবো পালং শাক এর উপকারিতা সম্পর্কে। নিউট্রিশনিস্টরা বলেন, পুষ্টিতে ভরপুর পালং শাক(Spinach)। তাই একে নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত। তাঁদের মতে, এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল। তার মধ্যে ভিটামিন এ, বি২, সি, ই, কে, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, জিঙ্ক, কপার ও প্রোটিন(Protein) এইগুলি তো আছেই। তা ছাড়াও আরও অনেক খাদ্যগুণ রয়েছে এতে।পালং শাক

জেনে নিন পালং শাক এর ৩০টি উপকারিতা সম্পর্কে

প্রতি ১০০ গ্রাম পালং শাকে থাকে –

১) খাদ্যশক্তি – ২৩ কিলোক্যালরি,

২) আঁশ – ০.৭ গ্রাম,

৩) কার্বোহাইট্রেড – ৩.৬ গ্রাম,

৪) শর্করা – ০.৪ গ্রাম,

৫) প্রোটিন – ২.২ গ্রাম,

৬) ভিটামিন এ – ৪৬৯ মাইক্রোগ্রাম,

৭) ভিটামিন সি – ২৮ মিলিগ্রাম,

৮) লিউটিন – ৫৬২৬ মাইক্রোগ্রাম,

৯) ফোলেট – (বি৯) ১৯৬ মাইক্রোগ্রাম,

১০) ভিটামিন কে – ৪৬৩ মাইক্রোগ্রাম,

১১) পটাশিয়াম – ২০৮ মিলিগ্রাম,

১২) ফ্ল্যাভোনয়েড – ১০ রকমেরও বেশি ধরনের,

১৩) ক্যালসিয়াম – ৯৯ মিলিগ্রাম,

১৪) নিকোটিনিক অ্যাসিড – ০.৫ মিলিগ্রাম,

১৫) রাইবোফ্লোবিন – ০.০৮ মিলিগ্রাম,

১৬) থায়ামিন – ০.০৩ মিলিগ্রাম,

১৭) অক্সালিক অ্যাসিড – ৬৫২ মিলিগ্রাম,

১৮) ফসফরাস – ২০.৩ মিলিগ্রাম,

১৯) আয়রন – ১১.২ মিলিগ্রাম,

২০) বিটাকেরোটিন।

কী ভাবে খাওয়া যায় পালং শাক?
পালং শাক খাওয়া যায় রান্না করে। তার মধ্যে শাক ভাজা, চচ্চড়ি, ছেঁচকি, পনির দিয়ে সুস্বাদু নানান রেসিপি, মাছ দিয়ে নানান পদ ইত্যাদি তো হয়-ই। তা ছাড়াও সেদ্ধ, সালাড, স্যুপ(Soup) অথবা জুস করেও খাওয়া যায়।

শরীরের কোন কোন উপকার করে পালং শাক?
শাকটিতে মজুত রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং অ্যন্টিঅক্সিডেন্ট(Antioxidant)। সেই সঙ্গে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় আয়রন, ফলেট, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম(Calcium) এবং আরও নানাবিধ ভিটামিন এবং খনিজ। এইগুলি শরীরে প্রবেশ করার পর ওজন হ্রাসের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। তাই নিয়মিত এই শাক খাদ্য তালিকায় রাখলে অতিরিক্ত মেদ ঝরে যায়।

২) কোলেস্টেরল কমাতে – পালং শাকে যে সমস্ত পুষ্টিগুণ রয়েছে তা শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

৩) লবণের ভারসাম্যে – পালং শাকে রয়েছে বিপুল পরিমাণে পটাশিয়াম(Potassium)। এই খনিজটি শরীরের সোডিয়াম বা লবণের হারিয়ে যাওয়া ভারসাম্য ফিরে আনতে সাহায্য করে।

৪) রক্তচাপ কমাতে – পালং শাকে থাকা পটাশিয়ামের কারণে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া রক্তচাপ(Blood pressure) স্বাভাবিক হয়। স্বাভাবিক ভাবেই রক্তচাপ বৃদ্ধির আশঙ্কা হ্রাস পায়। পালং শাকে থাকা ফলেটও রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

৫) মস্তিষ্কের জন্য – পালং শাকের অ্যন্টিঅক্সিডেন্ট মস্তিষ্কের কোষগুলোকেও সুস্থ রাখে। তাদের সতেজ এবং কর্মক্ষম রাখে। এটি মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

৬) কোলনের জন্য – পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি(Vitamin C) এবং বিটা কেরোটিন রয়েছে। এই দুই উপাদান কোলনের কোষগুলোকে রক্ষা করে।

৭) বাত ও অস্টিওপোরোসিস – বাতের ব্যথা, অস্টিওপোরোসিসের ব্যথা যন্ত্রণায় প্রদাহনাশক হিসেবে পালং শাক খুব ভালো কাজ করে।

৮) মাইগ্রেশন, মাথাব্যথা – মাইগ্রেনের মতো সাংঘাতিক মাথার ব্যথায় পালং শাকের খাদ্যগুণ খুবই উপকার দেয়।

৯) আরথ্রাইটিস – শরীরে বিভিন্ন গাঁটের বা জয়েন্টের রোগ নিরাময়ে পালং শাক খুবই কাজ দেয়। তার মধ্যে যেমন আরথ্রাইটিসের মতো সমস্যাগুলিতে পালং শাক উপকারী। তা ছাড়াও বাতের ব্যথা, জয়েন্টের ব্যথা(Pain) ইত্যাদির ঝুঁকি কমায়।

১০) স্মৃতিশক্তি – এতে থাকা পটাশিয়াম(Potassium), ফলেট এবং অ্যন্টিঅক্সিডেন্ট যদি প্রতিদিন শরীরে যায়, তা হলে মস্তিষ্কের বিশেষ বিশেষ অংশের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে স্মৃতিশক্তি মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে পটাশিয়ামের দৌলতে মনোযোগ ক্ষমতারও উন্নতি ঘটে। সুতরাং পালং শাক স্মৃতিশক্তি বাড়াতে এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে খুবই কার্যকর।

১১) রক্তাল্পতায় – পালং শাকে আছে প্রচুর আয়রন ও ভিটামিন সি। এইগুলি রক্তাল্পতা দূর করে। প্রচুর পরিমাণে থাকা আয়রন হিমোগ্লোবিন তৈরি করে। এতে থাকা বেশি মাত্রার ভিটামিন এ(Vitamin A) লিম্ফোসাইট বা রক্তের শ্বেত কণিকার প্রয়োজনীয় মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে। দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও শক্তিশালী করে। বিভিন্ন সংক্রমণ রোগ থেকে রক্ষা করে।

১২) রোগ প্রতিরোধ – বিভিন্ন ধরনের খাদ্যগুণের কারণে পালং শাকে রয়েছে শরীরে রোগ প্রতিরোধক শক্তি(Immunity) গড়ে তোলার ক্ষমতা।

১৩) হজম ক্ষমতা – পালং শাকে থাকা অ্যামাইনো অ্যাসিড(Amino acids) হল এমন একটি উপাদান, যা মেটাবলিজম রেট বাড়াতে সাহায্য করে। তার ফলে হজম ক্ষমতার উন্নতি হয়।

১৪) কোষ্ঠকাঠিন্য – পালং শাক পেট পরিষ্কার রাখতে অপরিহার্য। এইটি সহজে হজম(Digestion) শক্তি বাড়ায়। ফলে তা অনায়াসেই মল প্রস্তুতে সহায়তা করে এবং পেটে জমে থাকা মল বের করে দিতেও সাহায্য করে। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।

১৫) কিডনির জন্য – বিশেষজ্ঞের মতে, পরিমাণ মতো ও নিয়মিত পালং শাক খেলে তার মধ্যে থাকা খাদ্যগুণের ফলে কিডনিতে পাথর থাকলে, তা গুঁড়ো হয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।

১৬) ক্যান্সার প্রতিরোধে – পালং শাকে ১৩ প্রকার ফাভোনয়েডস আছে। এই ফাভোনয়েডস ক্যানসার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে প্রোস্টেট ক্যানসার(Cancer) প্রতিরোধে এটি খুবই কার্যকর।

১৭) ঋতুর সমস্যায় – পালং শাকে প্রচুর ভিটামিন ও মিনারেলস আছে। তাই পালং শাক নিয়মিত খেলে মাসিকজনিত সমস্যা দূর হয়।

১৮) ক্ষয়রোধে – পালং শাকে প্রচুর ক্যালসিয়াম(Calcium) আছে, দাঁত ও হাড়ের ক্ষয়রোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

১৯) জন্ডিসে – পালং শাক জন্ডিসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য বিশেষ উপকারী।

২০) চোখের জন্য – চোখের জন্যও পালং শাক উপকারী। নিয়মিত পালং শাক খেলে দৃষ্টিশক্তি বাড়ে। চোখে ঝাপসা দেখা বা কম দেখার সমস্যা দূর হয়। প্রচুর পরিমাণে বিটা-ক্যারোটিন, লুটেইন এবং জ্যান্থিন আছে। এই উপাদানগুলি রেটিনার ক্ষমতা বাড়ানোর মধ্যে দিয়ে দৃষ্টিশক্তির উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা নেয়। ভিটামিন এ(Vitamin A)আই আলসার এবং ড্রাই আইয়ের মতো সমস্যা কমাতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়।

২১) স্কিন ডিজিজ – পালং শাকে রয়েছে নিয়োক্সেথিন এবং ভায়োল্যাক্সানথিন নামক দু’টি অ্যন্টিইনফ্লেমেটরি উপাদান। এই উপাদানগুলি দেহের পাশাপাশি ত্বকের ভিতরে প্রদাহের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। ফলে নানাবিধ স্কিন ডিজিজের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

২২) হৃদরোগ – পালং শাকে লুটেইন নামক পদার্থ রয়েছে যা খারাপ কোলেস্টেরলের(Cholesterol) মাত্রা কম করে হৃদরোগের ঝুঁকির হাত থেকে রক্ষা করে। এর মধ্যে থাকা ফলিক অ্যসিড সুস্থ কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

২৩) হার্টের পেশি – পালং শাকের ভিতরে থাকা নানা অ্যন্টিঅক্সিডেন্ট, হার্টের পেশিকে সুস্থ সবল রাখে। এর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ফলে হাইপারলিপিডেমিয়া, হার্ট ফেলিওর এবং করোনারি হার্ট ডিজিজের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে।

২৪) পেশির জন্য – পালং শাকের ভিতরে থাকা নানা অ্যন্টিঅক্সিডেন্ট(Antioxidant), হার্টের পেশির পাশাপাশি সারা শরীরের অন্যান্য পেশির শক্তি বাড়াতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়। ফলে সার্বিকভাবে শরীরের কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।

২৫) অতিবেগুলি রশ্মি – পালং শাকের ভিতরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি(Vitamin B)। এটি সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির কারণে ত্বকের ক্ষতি রোধ করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ত্বক পুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা যেমন কমে। সঙ্গে স্কিন ক্যানসারের মতো রোগের সম্ভাবনা দূর হয়।

২৬) ব্রণের সমস্যা – ব্রণের সমস্যায় পালং শাকের প্যাক উপকারী। কিছুটা পালং শাক(Spinach) নিয়ে তার সঙ্গে অল্প জল মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে নিতে হবে। তা ভাল করে মুখে লাগিয়ে কম করে ২০ মিনিট রাখতে হবে। শুকিয়ে গেলে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এই পদ্ধতি প্রতিদিন করলে ভেতরে জমে থাকা ক্ষতিকর উপাদান বেরিয়ে যাবে। সঙ্গে সিবামের উৎপাদনও কমবে। স্বাভাবিকভাবেই ব্রণের সমস্যা কমবে। নিয়মিত পালং শাকের রসও কিন্তু সমান উপকার দেয়।

২৭) শরীর ঠাণ্ডা করতে – দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে, শরীরের অকারণ গরম ভাব কমিয়ে ঠাণ্ডা ও স্নিগ্ধ রাখে পালং শাক(Spinach)।

২৮) চুল পড়ায় – অতিরিক্ত হারে চুল পড়লে চুলের পরিচর্যায় পালং শাক কাজে লাগে। শাকটিতে উপস্থিত আয়রন, চুল(Hair) পড়ার মাত্রা কমানোর পাশাপাশি দেহের লোহিত কণিকার ঘাটতি দূর করতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এ ক্ষেত্রে পালং শাকের রস চুলে লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হয়। তাতে উপকার পাওয়া যায়। তা ছাড়া নিয়মিত পালং শাকের রস উপকার দেয়।

২৯) যৌবন ধরে রাখতে – বয়সের ছাপ লুকানোর জন্য পালং শাক খুবই ভালো একটি খাবার। পালং শাকে আছে প্রচুর পরিমাণ অ্যন্টিঅক্সিডেন্ট(Antioxidant)। এই অ্যন্টিঅক্সিডেন্টের কাজই হল কোষের ক্ষয়রোধ করে শরীরকে তারুণ্যদীপ্ত রাখা। সুস্থসবল সতেজ রাখা।

৩০) ফর্সা ত্বকে – পালং শাকে উপস্থিত ভিটামিন কে এবং ফলেট ত্বককে ফর্সা(Fair) করে। সঙ্গে চোখের নীচের ডার্ক সার্কেলকে দূর করে। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে।

সুস্থ থাকুন, নিজেকে এবং পরিবারকে ভালোবাসুন। আমাদের লেখা আপনার কেমন লাগছে ও আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে তবে নিচে কমেন্ট করে জানান। আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্টটি পৌঁছে দিতে দয়া করে শেয়ার করুন। পুরো পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

Check Also

হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি

গরমে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কেন বাড়ে?

শুধু শীত নয়, গরমেও বাড়তে পারে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি (Heart attack risk)। বিশেষ করে আপনার ...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *